কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবকে সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর উপর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করেছেন। এ লেখায় মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সংরক্ষণ ও সংকলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে। হযরত মুসা (আ) কে কালিমুল্লাহ, হযরত ইব্রাহিম (আ) কে খলিলুল্লাহ, আর হযরত মুহাম্মদ (সা) কে বলা হয় হাবিবুল্লাহ।
আল কুরআনের পরিচয়
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন হলো মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য হেদায়াত তথা সঠিক পথে চলার দিক-নির্দেশনা। কুরআন পাঠ ও কুরআনের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারলে সাফল্য আসবেই। কোরআনের আলোকে যিনি নিজের জীবন পরিচালনা করতে পারবেন তিনি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভে সামর্থ্য হবেন। আল কুরআন নিছক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক কোন গ্রন্থ নয়, বরং এতে একাধারে ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, দর্শন, নীতিকথা, ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মানুষ ও জগৎ সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়, সৃষ্টি জগৎ, স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক, ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন যে, এটি এমন গ্রন্থ যাতে পৃথিবীর সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় যে আল কুরআন মহা অলৌকিক গ্রন্থ। এ ধরনের কোনো গ্রন্থ মানুষের পক্ষে রচনা করা শুধু অসম্ভবই নয়, অকল্পনীয়ও বটে।
কুরআন নাজিলের ভাষা
আল-কুরআন আরবি ভাষায় নাযিলকৃত হেদায়েত গ্রন্থ। ভিন্ন ভাষাভাষী লোকজন যাতে এর অর্থ, তাৎপর্য ও মর্মবাণী উপলব্ধি করতে পারে সেজন্য প্রায় সকল ভাষাতেই এটি অনুবাদ করা আছে। কুরআন একমাত্র গ্রন্থ, যা পৃথিবীতে প্রচলিত সর্বাধিক ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
আল কুরআনের সংরক্ষক
মহান আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজেই পবিত্র কোরআনের হেফাজতকারী তথা সংরক্ষক। এ প্রসঙ্গে সূরা হিজর এর ৯ নং আয়াতে বর্ণিত আছে যে, “আমি (আল্লাহ) কোরআন অবতীর্ণ করেছি, আর অবশ্যই আমি এর সংরক্ষক।”
কুরআন নাযিলের সর্বপ্রথম স্থান
ইসলামী গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবের উপর জিব্রাইল ফেরেশতার মাধ্যমে ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে কুরআন নাযিল করা শুরু করেন। মক্কা নগরীর জাবালে নূর বা নূর পর্বতের একটি গুহার নাম হলো গারে হেরা বা হেরা গুহা। এই হেরা গুহাতেই সর্বপ্রথম সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত নাযিল হয়।
কুরআন সংকলনের প্রথম উদ্যোগ গ্রহণকারী
কোরআন সংকলনের জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা।
আল কুরআনের প্রথম সংকলক
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের প্রথম সংকলক হলেন হযরত জায়েদ বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা।
কোরআন সংকলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
‘ইয়ামামা’ নামক স্থানে মুসলমান এবং কাফেরদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে প্রায় ৩৫ জন কুরআনে হাফেজ শাহাদাত বরণ করেন। এতো সংখ্যক হাফেজের ইন্তেকালে আবু বকর (রা.) পেরেশান হয়ে পড়েন। কেননা, তখন পর্যন্ত কুরআন লিখে রাখার প্রচলন শুরু হয়নি। হযরত আবু বকর (রা.) কুরআন মাজীদ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেন। এজন্য তিনি কুরআন মাজীদ লিখিত আকারে একত্রিত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। প্রথমেই তিনি হযরত ওমর (রা.) এর নিকট এই মত ব্যক্ত করেন। এরপর তিনি হযরত জায়েদ বিন সাবেত (রা.) কে কোরআন সংকলনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে, জাহিদ বিন সাবেত (রা.) ছিলেন একজন আনসারী সাহাবী। জ্ঞান-গরিমায় অতুলনীয় কাতিবে ওহী হযরত যায়েদ বিন সাবেত (রা) রাসুল (সাঃ) এর সময়ে কুরআন মাজীদ লিখে রাখতেন। জায়েদ বিন সাবেত এই সকল লিখিত উপকরণ এবং হাফেজদের স্মৃতি কাজে লাগিয়ে কুরআন শরীফের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কপি তৈরি করেন। এরপর সেই কপি তিনি আবু বকর এর নিকট হস্তান্তর করেন। আবু বকর (রা.) এই কপিটি সংরক্ষণ করে রাখেন। কুরআন মাজীদের সংকলনকৃত এই কপিটি হযরত আবু বকর (রা.) এর পরে হযরত ওমর (রা.) নিকট আসে। হযরত ওমর (রাঃ) এর শাহাদাত লাভের পর কপিটি উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা (রা.) এর নিকটে সংরক্ষিত থাকে। এরপর ইসলামের তৃতীয় খলিফা ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জামাতা হযরত ওসমান এর আমলে অভিযোগ ওঠে যে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ কুরআনের ব্যাপারে মতবিরোধের শিকার হচ্ছেন এমতাবস্থায় ওসমান (রা) হাফসা (রা) এর নিকট থেকে জায়েদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা এর সংকলনকৃত কুরআনের কপিটি চেয়ে নেন এবং দক্ষ সাহাবীদেরকে আরো কতগুলো কপি তৈরি করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে সেই সংকলনকৃত কপিগুলোই মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, হযরত ওসমান (রা.) এর বিরুদ্ধে কুরআন মাজীদ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ আসে অথচ তিনি কুরআনের বিক্ষিপ্ত- এলোমেলো ও ভুল কপিগুলো পুড়িয়ে দিয়ে সঠিক ও সন্দেহমুক্ত কপিটি প্রচলনের কাজ সম্পন্ন করেন। এজন্য হযরত ওসমান (রা.) কে জামিউল কুরআন বলা হয়।
আরও পড়ুন- ত্যাগের উৎসব ঈদুল আযহার ইতিহাস ও তাৎপর্য
আরও পড়ুন- ঈদ উল ফিতর অর্থ কি? কীভাবে শুরু হয়েছিল?
আরও পড়ুন- পবিত্র লাইলাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজের অর্থ ও ইতিহাস
আরও পড়ুন- ছানা দোয়ার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ || নামাজে ছানা কখন পড়তে হয়?