জলবায়ু পরিবর্তন: অত্যাধিক গরমে নাকাল নগরজীবন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইদানিং জনজীবনের প্রধান সমস্যা হচ্ছে অত্যধিক গরম। অতিরিক্ত গরমে মানুষ থেকে শুরু করে সমস্ত প্রাণীকুল এমনকি উদ্ভিদসমূহেরও ব্যাপক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গরমের মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাতাসে কার্বন, মিথেন সহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ হচ্ছে। তাছাড়াও সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ থেকে বাতাসের আদ্রতা বেড়ে গেছে যে কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। দূষিত বাতাস, তীব্র যানজট ও তার থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া সহ নানাবিধ কারণে এইবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বইছে। সাধারণত ৩৬° থেকে ৩৭. ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু, ৩৮° থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি, ৪০-৪১.৯ ° সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর উপরে তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

গরমের প্রভাব

আমাদের দেশে মূলত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এই ৪ মাস সময় গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকাল। কিন্তু এবার আগেভাগেই প্রচন্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া, দূষিত ও ক্ষতিকর বাতাস ‌এবং আদ্রর্তা কমে যাওয়াকে। গরমের প্রভাবে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে নিজেরাই নিজেদের দোষী সাব্যস্ত করছে। কারণ তারাই গাছপালা কেটে বন উজাড় করে সেখানে নিজেদের বাসস্থান থেকে শুরু করে সামগ্রিক সবধরনের প্রয়োজন মেটানোর আবাস গড়ে তুলছে, কলকারখানা নির্মাণ করছে যা থেকে নির্গত ক্ষতিকর পদার্থ বাতাসকে দূষিত করে স্বাভাবিক অবস্থা পাল্টে দিচ্ছে। অপরদিকে প্রচুর পরিমাণে গাছপালা কাঁটার ফলে বাতাসে অক্সিজেনের সাথে কার্বন ডাই অক্সাইডের সামঞ্জস্যতা হারাচ্ছে প্রকৃতি। ফলে বাতাস হয়ে উঠছে উত্তপ্ত।

হঠাৎ করে আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন প্রভাব ফেলেছে মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে। নানা ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে ছোট শিশুদের মাঝে, বয়ষ্করাও অতিরিক্ত গরমে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এখন বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা, আর এই বৃষ্টি না হওয়ার পিছনে দায়ী আমরাই। গাছপালা উজাড় করে আমরা নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে অক্সিজেনের যে ঘাটতি তৈরি করছি তা পূরণ করতে পারছে না প্রকৃতি উল্টো সেখানে আমরা নিজেরাই পরিবেশকে বিভিন্নভাবে দূষিত করে অভ্যন্তরীণ অবস্থা উত্তপ্ত করে তুলছি।

অতিরিক্ত গরমে প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টিকূলও তাদের নিজস্বতা হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের সমাজের শিক্ষিত মানুষেরাই গরম বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তাদের অপরিমাণদর্শী ও লোভনীয় কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েছে প্রায় চার শতাংশ। এছাড়াও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এসি ব্যবহারকেও তাপমাত্রা বাড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গরমে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এসির ব্যবহার। এতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচের কারণে লোড শেডিং বাড়ছে।

এইরকম দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের বেশি করে বৃক্ষ রোপন করতে হবে, যাতে করে প্রকৃতিতে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করা যায়। সেই সাথে পলিথিনের ব্যবহার কমাতে হবে, জ্বালানী হিসেবে প্রক্রিয়াজাত উপাদান ব্যবহার না করে খনিজ উপাদান ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে করে বাতাসে কার্বনের নিঃসরণ কম হবে এবং ঠান্ডা থাকবে পরিবেশ। এছাড়াও CFC (ক্লোরোফ্লোরোকার্বন ) গ্যাস নির্গত করে এমন দ্রব্যাদি যথা- এরোসল, মশার কয়েল, রেফ্রিজারেটর এইসবের ব্যবহার কমাতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষকে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূষণ কমাতে হবে। তাতে যদি কিছুটা উপকৃত হয় পরিবেশ

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *