দোহাজারী কক্সবাজার রেল প্রকল্প
দোহাজারী কক্সবাজার প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১০ সালে সরকার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। নানা জটিলতা, প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সেই রেললাইন এখন কল্পনাকে ছাড়িয়ে বাস্তবতায় রূপ নিতে যাচ্ছে।
দোহাজারী কক্সবাজার রেল প্রকল্প
অনুমোদনঃ দোহাজারী কক্সবাজার রেল প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ৬ জুলাই, ২০১০।
অবস্থানঃ দোহাজারী, চট্টগ্রাম-রামু, কক্সবাজার।
নির্মাণ কাজ শুরুঃ ১ মার্চ, ২০১৮
সম্ভাব্য উদ্বোধনঃ ডিসেম্বর, ২০২৩ *ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানঃ চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড
স্টেশন সংখ্যাঃ এই প্রকল্পে মোট স্টেশন সংখ্যা ৯টি।
দৈর্ঘ্যঃ ১০০ কিলোমিটার
মালিকানাঃ রেলপথ মন্ত্রণালয়
উন্নয়ন সহযোগীঃ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
লাইনের ধরণঃ ডুয়েল গেজ
সম্ভাব্য ব্যয়ঃ প্রাক্কলিত ১৮,০৩৪.৪৮ কোটি টাকা।
প্রকল্প সহায়তাঃ ১৩,১১৫. ৪১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সরকারঃ ৪,৯১৯.০৭ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা প্রতিবেদন অনুযায়ী দোহাজারী কক্সবাজার রেল প্রকল্পের মিটার গেজ লাইনে ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার এবং ব্রডগেজ লাইনে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
সড়ক পথের উপর চাপ হ্রাস
পর্যটন নগরী কক্সবাজার যাওয়ার জন্য বর্তমানে একমাত্র উপায় সড়ক পথ। ঢাকা থেকে রেলে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ভ্রমণ সম্ভব হলেও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে বর্তমানে কোনো রেলপথ নেই। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রেলের মাধ্যমে সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাতায়াত সম্ভব হবে যা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের সড়কের উপর চাপ কমাবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলের সাথে সংযুক্তি ফ্রান্স এশিয়ান রেলে যুক্ত হওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের রামু হয়ে মিয়ানমারের ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইনের প্রয়োজন ছিলো প্রকল্পের শুরুতে দোহাজারী থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটারের রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলেও মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার এর কাজ আপাতত বন্ধ। প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে সরাসরি মিয়ানমার পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপিত হবে।
বাণিজ্যে অগ্রগতি
কক্সবাজার থেকে রাজধানীতে বা দেশের অন্য যে কোনো স্থানে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য দোহাজারী কক্সবাজার রেল সংযোগ বিশেষ ভূমিকা রাখবে। যা কক্সবাজার জেলায় শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ড বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন
রেল সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কম খরচে এবং কম সময়ে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট উপেক্ষা করে সরাসরি কক্সবাজার পৌঁছানোর সুবিধার ফলে কক্সবাজারের মূল আকর্ষণ সমুদ্র সৈকতসহ অন্যান্য স্থানে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
পদ্মা সেতু রেল- সংযোগ
অনুমোদনঃ একনেক সভায় অনুমোদন পায় ৩ মে, ২০১৬
উন্নয়ন সহযোগীঃ চীনা এক্সিম ব্যাংক,চীন *অবস্থানঃ ঢাকা থেকে যশোর
প্রকল্পের ধরণঃ জি টু জি
দৈর্ঘ্যঃ ব্রডগেজ-১৬৯ কিলোমিটার, ডুয়েল গেজ ৩ কিলোমিটার। সর্বমোট ১৭২ কিলোমিটার
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানঃ চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড
সম্ভাব্য উদ্বোধনঃ জুন, ২০২৪
মালিকানাঃ রেলপথ মন্ত্রণালয়
নির্মাণ কাজ শুরুঃ ২০১৮ সালে
লাইনের ধরনঃ ব্রডগেজ
সম্ভাব্য ব্যয়ঃ প্রাক্কলিত ব্যয়- ৩৯,২৪৬.৮০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার-১৮২১০.১১ কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা- ২১, ০৩৬.৬৯ কোটি টাকা।
রেললাইন নির্মাণ
পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ ৩ ধাপে করা হচ্ছে। ধাপ) (৩)তিনটি হলো- ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেল যোগাযোগ চালু হতে পারে জুন,২০২৩ এ। এর ফলে ঢাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে বিকল্প আরো একটি পথ চালু হবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের মধ্যে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আরো একটি উপ-রুট স্থাপন হবে। *জিডিপি বৃদ্ধিঃ রেলের সমীক্ষা অনুযায়ী এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষিণের একুশ(২১)টি জেলার উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বাড়াবে। ফলে জিডিপি এক(১) শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
ভারী রেল চলাচলের অসুবিধা দূর হবে
বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ভারী মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারেনা। ওই সেতুতে ট্রেনের গতীও সীমিত। ফলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মালামাল ট্রেনে পরিবহন করা যায় না। নতুন রেললাইন হতে দূরত্ব কমবে, ভারী মালবাহী ট্রেন চলাচল বাড়বে।
দূরত্ব ও সময় হ্রাস
ঢাকা থেকে খুলনা রেলপথে যেতে বঙ্গবন্ধু ও লালনশাহ সেতু হয়ে যেতে হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার হ্রাস পাবে। ফলে এই যাত্রার সময় ১১ ঘণ্টা থেকে চার(৪) ঘন্টায় নেমে আসবে।
বরিশাল বিভাগের রেল সংযোগ
২০৩৫ সালের মধ্যে দেশের ৬৪ জেলাকে রেল সংযোগের আওতায় আনার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছ। কিন্তু বর্তমানে বরিশাল বিভাগে কোনো রেল সংযোগ ও লাইন নেই। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সড়কপথে যুক্ত হলো। এই সেতু ব্যবহার করে নির্মিত রেল প্রকল্পটি বরিশাল বিভাগে রেল সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশের শতভাগ জেলা রেলের আওতায় আনতে সহায়তা করবে।
পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি
রেলপথে পণ্য পরিবহন ও সময় খরচ সাশ্রয়ী। বর্তমানে সড়কপথে দক্ষিণের সাথে রাজধানী সংযুক্ত থাকলেও রেল পথে যুক্ত নয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণের পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি এবং দক্ষিণে অবস্থিত তিন (৩)টি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন- মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য
আরও পড়ুন- মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য
আরও পড়ুন- ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য
আরও পড়ুন- বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান