বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর কাজ ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করতে পারেন বলে জানালেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। যদিও বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বঙ্গবন্ধু টানেল
একনেক সভায় অনুমোদনঃ ১২ নভেম্বর, ২০১৫
মালিকানাঃ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ
দৈর্ঘ্যঃ বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪ কিলোমিটার (২টিউব)
ধরণঃ জি- টু- জি
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানঃ চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)
উন্নয়ন সহযোগীঃ চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চীনা এক্সিম ব্যাংক (২ শতাংশ সুদে)
অবস্থানঃ বঙ্গবন্ধু টানেল অবস্থান করছে চট্টগ্রাম জেলার পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলায়
নির্মাণ কাজ শুরুঃ বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
গভীরতাঃ বঙ্গবন্ধু টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা ১৫০ মিটার
সম্ভাব্য উদ্বোধনঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২
এপ্রোচ রোডঃ ৫.৩৫ কিলোমিটার
সম্ভাব্য ব্যয়ঃ বঙ্গবন্ধু টানেলের সম্ভাব্য ব্যয় ৯৮৮০.৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার ৩৯৬৭.২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৫৯১৩.১৯ কোটি টাকা।
টিউবের ব্যাসঃ বঙ্গবন্ধু টানেলের টিউবের ব্যাস ১০.৮০ মিটার।
নির্মাণ প্রযুক্তি
শিল্ড ড্রাইভেন মেথড পদ্ধতিতে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হচ্ছে। টিবিএম বা টানেল বোরিং মেশিনটি প্রকল্পের পশ্চিম প্রান্তের সুড়ঙ্গে প্রবেশ করানোর পর টানেল নির্মাণ করে আনোয়ারা প্রান্ত দিয়ে বের হবে। ব্যবহৃত মেশিনটি চীনা কোম্পানি ‘টানহেং মেকানিক্যাল’ চীনের জিয়াংসু প্রদেশের কারখানায় প্রস্তুত করেছে। ১২ দশমিক ১২ মিটার ব্যাসের মেশিনটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যবহৃত সবচেয়ে বড় বোরিং মেশিন। বাংলাদেশের জন্য চীনের তৈরি এই টিবিএমটির দৈর্ঘ্য ৯৪ মিটার এবং এটির ওজন ২২ হাজার টনের বেশি।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাঃ
কর্ণফুলী নদীর উপর ইতোমধ্যে তিনটি সেতু নির্মিত হয়েছে যা বিরাজমান প্রচুর পরিমাণ যানবাহনের জন্য যথেষ্ট নয়। নদীর মরফলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমা একটি বড় সমস্যা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতার জন্য বড় হুমকি। এই পলি জমা সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য কর্ণফুলী নদীর উপর আর কোনো সেতু নির্মণ করে না করে বরং এর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা প্রয়োজন ছিল। এজন্য সরকার চট্টগ্রাম জেলার দুই অংশকে সংযুক্ত করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পায়ন
টানেলের কারণে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে নগরায়ন, শিল্পায়ন ও বন্দরের কার্যক্রম প্রসারিত হবে। আনোয়ারা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত গড়ে উঠবে নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়া মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত শিল্প করিডর (সড়ক ঘিরে শিল্পায়ন) হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর উপর চাপ কমানো
টানেলে যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িগুলোকে আর নগরে প্রবেশ করতে হবে না। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এর ফলে চট্টগ্রাম নগরেও যানবাহনের চাপ কমে যাবে।
জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব
কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে এলাকার আশে পাশে শিল্পোন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এই টানেল দেশের জিডিপি ০.১৬৬ শতাংশ বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। ডিপিপি মোতাবেক এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফাইন্যান্সিয়াল এবং ইকোনমিক আইআরআর এর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬.১৯% এবং ১২.৪৯%। তাছাড়া, ফাইনান্সিয়াল ও ইকোনমিক বেনিফিট কস্ট রেশিও (বিসিআর) এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১.০৫ এবং ১.৫০। ফলে কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এশিয়ান হাইওয়ের অংশ
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সাথে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।
আরও পড়ুন- মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য
আরও পড়ুন- মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য
আরও পড়ুন- ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য