মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য
বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ খাতে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার অংশ হিসেবে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। ১ হাজার ৩২০ (২x৬৬০) মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে এবং এটি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার রামপালে অবস্থিত। মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট ভারত সরকারের রেয়াতি অর্থায়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হচ্ছে।
মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য
জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তিঃ ২৯ জানুয়ারি, ২০১২
নির্মাণ কাজ শুরুঃ ২৪ এপ্রিল, ২০১৭
উন্নয়ন সহযোগীঃ ভারতের এক্সিম ব্যাংক
অবস্থানঃ রামপাল, বাগেরহাট, খুলনা
ক্ষমতাঃ ১৩২০ মেগাওয়াট (২টি ইউনিট ৬৬০×২)
জ্বালানিঃ কয়লা
সম্ভাব্য ব্যয়ঃ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ইসিএ অর্থায়ন ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১২,৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অর্থায়ন ১৬০০ কোটি টাকা এবং এনটিপিসি লিমিটেড ভারত অর্থায়ন ১,৬০০ কোটি টাকা।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানঃ ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন, ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল), ভারত
মালিকানাঃ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং এনটিপিসি লিমিটেড ভারত
উদ্বোধনঃ ১ম ইউনিট- ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২; ২য় ইউনিট- জুন, ২০২৩(সম্ভাব্য)।
আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি
কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পুড়িয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয় এবং সেই বাষ্প ব্যবহার করে টারবাইন ঘুরানো হয়, যা এর সাথে সংযুক্ত জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করে। সাধারণ কয়লা চালিত প্লান্টে এই কাজের জন্য কর্মদক্ষতা পাওয়া যায় প্রায় ২৮%। কিন্তু আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত পানির তাপমাত্রা ও চাপ থাকে পানির ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রার এবং চাপের উপর। ফলে প্ল্যান্টের কর্মদক্ষতা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫%।
বিদ্যুৎ সংযোগ
১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে খুলনা-মোংলা ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। লাইন নির্মাণের জন্য ৮৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ভারতীয় কোম্পানি ইএমসি ও চীনা কোম্পানি টিবিই।
পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যক্রম
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতে, রামপালে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এবং যেসব দূষণবিরোধী পদক্ষেপ বা মিটিগেটিং মেজারস নেয়া হয়েছে তাতে সুন্দরবনের বা পরিবেশের বড় কোনো ঝুঁকি থাকবে না। জাতিসংঘ ও ইউনেস্কো আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি সমর্থন করে কারণ এতে কয়লা কম ব্যবহৃত হয় এবং এতে কার্বন নিঃসরণও কম। পাশাপাশি কয়লা পোড়ানোর ফলে নির্গত সালফার অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইডও বাতাসে মিশতে পারে না। তাই রামপালে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।
পানি সরবরাহ
শুষ্ক মৌসুমে রূপসা নদীর প্রবাহিত পানির ২০,০০০ ভাগের এক (১) ভাগ ব্যবহৃত হবে। পানির ব্যবহার সীমিত করতে ওয়াটার রিসাইকেল পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহৃত পানি পুনঃপুন ব্যবহার হবে। নদী দূষণ রোধে গরম পানি বা অপরিশোধিত পানি নদীতে ফেলা হবে না।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়েছে। ফলে দক্ষিণবঙ্গ শিল্পায়নের পথে একধাপ এগিয়ে গেছে। কিন্তু শিল্পায়নের জন্য যোগাযোগের পাশাপাশি বিদ্যুতের প্রয়োজন। বিদ্যুতের এই চাহিদা পূরণে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন- ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য