অপুকে কতবার গর্ভপাত করিয়েছিলেন শাকিব খান?
ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। পর্দায় যাকে দেখা যায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, মা-বোনের সন্মান রক্ষার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে। কিন্তু সিনেমার এই “বীর” বাস্তব জীবনে নিজের বউ-বাচ্চার কাছে কেমন? চলুন সেই উত্তর খুঁজি।
শাকিব-অপু গোপনে বিয়ে করেন ২০০৮ সালে। কয়েকমাস লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার পর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ছয় মাস বয়সী ছেলে আব্রাম খান জয়কে নিয়ে প্রকাশ্যে এসে অপু বলেন, শাকিবের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে, আর জয় তাদেরই সন্তান।
একে তো নিজের সন্তানের কোন সামাজিক পরিচয় নেই, দ্বিতীয়ত তখন বুবলী-শাকিবকে নিয়ে প্রেমের জোর গুঞ্জন চলছিল। সব মিলিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অপু গণমাধ্যমে এসে নিজের সন্তানের পরিচয় তুলে ধরেন।
আর এতেই রেগে ফায়ার পর্দার হিরো শাকিব খান। নিজের সন্তানের মাকে সন্মান করা তো দূরের কথা, উল্টো ডিভোর্সের পথে হাটেন তিনি।
এরপর গণমাধ্যমে অপু একের পর বোমা ফাটান। অপু জানান, সাকিব তাঁকে দুটি অপশন দিয়েছিলেন। হয় সন্তান, না হয় ডিভোর্স।
অপু গণমাধ্যমকে জানান, শাকিবের আপত্তির কারণে আমাকে তিনবার গর্ভপাত করাতে হয়েছে। জয় যখন গর্ভে আসে তখনও অ্যাবরশন করানোর জন্য আমাকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায় শাকিব। সেখানকার চিকিৎসক জানান, যেহেতু আগে তিনবার গর্ভপাত হয়ে গেছে আর নতুন করে কনসেপ্টের সময় ৪ মাস হয়ে গেছে, সেহেতু গর্ভপাত করানো হবে ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর শাকিব আমাকে কলকাতা পাঠায় গর্ভপাত করানোর জন্য। সেখানকার চিকিৎসকরাও অ্যাবরশন করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন আমি সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নিই। আর এতেই শাকিব আমার ওপর খেপে যায়। তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
সন্তান গর্ভপাত করানো নিয়ে শাকিব কতটা বেপোরয়া ছিলেন সেটি চলুন অপুর মুখ থেকেই শুনি।
“আমি যখন কনসিভ করলাম আমার বাচ্চাটাকে, এর আগে তো তিনটা এক্সিডেন্ট করিয়েছিল জোর করে, এরপর আমি যখন 4th এই বেবিকে কনসিভ করলাম তখন সে আমাকে ব্যাংককে পাঠিয়েছিল আবর্শনের জন্য। এমনকি আমার মেজো বোনকে ইন্ডিয়াতে সে অফার করেছিল যে, যত টাকা লাগুক আপনি এটা আবর্শন করে দেন।…… যেভাবেই হোক না কেন বাচ্চাটাকে destroy করতে হবে। কয় কোটি টাকা লাগবে?”
তিন তিনবার গর্ভপাত করানোর পর, একটি মেয়ে যদি আবারও গর্ভপাত না করাতে চায় তাহলে তাতে তাঁর দোষ কোথায়?
অপু ভেবেছিলেন শাকিব বাচ্চার মুখ দেখলে হয়ত গলে যাবেন, সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলবেন। কিন্তু তা তো হয়ই নি, উল্টো শাকিব বাচ্চার মুখ দেখেছেন কিনা জন্মের ২ মাস পর!!!
পর্দার শাকিব যেমন নাম্বার ওয়ান, তেমনি মিডিয়ার সামনে মিথ্যা কথা বলাতেও তাঁর জুড়ি নেই। বাচ্চাকে নিয়ে মিডিয়ার সামনে আদিখ্যেতা করলেও ভেতরে ভেতরে শাকিব কিছুই ঠিক করেন নি। তিনি একটাই গো ধরে ছিলেন অপু কেন জয়কে নিলেন। মিডিয়ার সামনে সাকিবের শো অফ করা নিয়ে অপু কি বলেছিলেন?
“প্লিজ দর্শক আপনাদের আজকে Valentine Day-তে বলে দিই শাকিব খান তার ক্যারিয়ারের জন্য বাচ্চার সাথেও নাটক করছে, প্লিজ তার ক্যারিয়ার আপনারা দেখে রাখবেন, বাচ্চাকে আমি দেখে রাখবো।”
এতো গেল অপু বিশ্বাসের কথা। এরপর পূজা চেরীর সাথে শাকিবের প্রেমের গুঞ্জন রটতেই লাইমলাইটে এলেন শবনম বুবলী। অপুর পর বুবলীও যেন একই চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি! আবারও গোপনে বিয়ে, সন্তান এবং সব কিছু জনসুম্মখে আসার পর বিচ্ছেদ।
বুবলী-শাকিবের বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি জনসম্মুখে আসার পর থেকে বেশির ভাগ মানুষ শাকিব-অপুর সংসার ভাঙ্গার জন্য বুবলীকে দায়ী করে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। এই বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য “আমার কিছু কথা” ক্যাপশন দিয়ে একটি লাইভ করেন বুবলী।
ভিডিওটিতে তিনি নানা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন শাকিব-অপুর বিচ্ছদের সময় তিনি সিনেমার জগতেই আসেন নি। বুবলীর কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু সমস্যা হলো একটি বিষয় পরিষ্কার করতে গিয়ে বুবলী মনের অজান্তে শাকিবের চরিত্রের কালো দিক উন্মোচন করে দিয়েছেন।
বুবলি জানান, তিনি ২০১৬ সালে ঢালিউডে পা রেখেছিলেন, আর ২০১৭ সাল থেকে শাকিব খানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে শুরু করেন। কিন্তু তখন তিনি জানতেন না অপু বিশ্বাসের সঙ্গে শাকিব খানের বিয়ে এবং পুত্র জয়ের কথা। বুবলী জানতেন, শাকিব খান সিঙ্গেল। তার বাসা থেকে পাত্রী খোঁজা হচ্ছে।
অর্থাৎ প্রথম দিকে নিজের বউ-বাচ্চার কথা গোপন করে বুবলীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শাকিব। বুবলীর মুখ থেকেই ঘটনাটি শুনুন।
“আমরা সবাই তো জানতাম যে উনি আসলে সিঙ্গেল। উনার ভালো লাগার জায়গাটা উনি শেয়ার করেছিলেন। আমি যদি জানতাম উনার জীবনে এ রকম জটিল কোন অবস্থা উনি পার করছেন তাহলে নিশ্চয়ই আমি সে জায়গা থেকে involve হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।”
অবাক করা ব্যাপার হলো অপু-বুবলী কেউই তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ তো সেভাবেই করেনই নি। উল্টো শাকিবকে প্রটেক্ট করে গেছেন দুজনই।
মিডিয়ার সামনে বুবলীর বলা মিথ্যাগুলো শাকিব নিজের ধরিয়ে দিয়েছেন। এই যেমন, বুবলী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছিলেন শাকিব তাঁকে একটি ডায়মন্ডের নাকফুল দিয়েছেন। কিন্তু শাকিব এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি সেটি দেননি।
বুবলী মিডিয়ার সামনে বারবার বলতে চেয়েছেন শাকিবের সাথে তাঁর সম্পর্ক সুন্দরভাবে চলছে। কিন্তু শাকিব বুবলীর এই মিথ্যাও মিডিয়ার কাছে ফ্ল্যাশ করে দিয়েছেন। শাকিব স্পষ্ট জানিয়েছেন বুবলীর সাথে তাঁর কোন রকম যোগাযোগই নেই।
শাকিব খান অপু-বুবলী কারো সাথেই যে আর সংসার করবেন না সেটি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সব কিছুর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন ষড়যন্ত্রতত্ব। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, “আমার ইচ্ছা ছিল, সময়মতো সুন্দর আয়োজনের মাধ্যমে ঘটা করে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে, সবার সঙ্গে একসঙ্গে আনন্দ করব। কিন্তু অপু বা বুবলী কেউই আমাকে সেই সুযোগ দেয়নি। আমার অপছন্দের কাজ করে সবার কাছে আমাকে ছোট করার পরও কী তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায়?”
শাকিব কোন সিনেমাটিক জগতে বাস করেন সেটি একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। একজন সুপারস্টারের সন্তানের কথা সবাইকে জানাতে কেন বিশেষ সময়ের দরকারের পড়ে সেটিও কেবল তিনিই বলতে পারবেন। সুস্থ মাথায় এই সব কর্মকান্ডের যুক্তি খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিলই বটে।