শিশুকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলতে কার্যকরী কিছু উপায়
কথায় আছে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। এক কথায়, শিক্ষা মানুয়ের জীবনের মূল চালিকা শক্তি। একটি শিশুর যখন মুখের বুলি ফোটে তখন থেকেই বাবা-মায়েরা তার শিক্ষা জীবনের হাতে-খড়ির প্রস্তুতি শুরু করেন৷ পৃথিবীর সকল বাবা-মায়েরাই চাই তাদের সন্তান যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়। কিন্তু শিশুর দুরন্তপনাকে বশে এনে তাকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলায় যেন বর্তমান সময়ের বড় এক চ্যালেঞ্জ। তারসাথে আবার যোগ হয়েছে স্মার্টফোনের আসক্তি। শিশুকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলার উপায় কি? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো আমাদের আজকের আর্টিকেল। চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলতে, শিশুর পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানোর কার্যকরী কিছু উপায়:
খেলার ছলে শিশুকে পড়াশোনায় অভ্যস্ত করে তোলা:
বাড়ন্ত বয়সের শিশুরা খেলতে ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই যখন একটি শিশুর মুখে প্রথম বুলি ফোটে তখনই বাবা-মায়ের উচিত তার সাথে বই নিয়ে খেলতে শুরু করা। তাকে বইয়ের বিষয়গুলো খেলার ছলে পড়িয়ে শোনানো। এতে করে ধীরে ধীরে তার মধ্যে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরী হবে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাকে নিয়ে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বই নিয়ে বসতে হবে যাতে সে বুঝতে পারে এখন বই নিয়ে খেলার সময়। মোট কথা, শিক্ষার শুরুটা হওয়া উচিত খেলার ছলে, বেত হাতে নয়।
শিশুকে অন্যের সাথে তুলনা না করা:
নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে অন্যের সাথে তুলনা করতে গিয়ে আমরা নিজেদের জীবনকে অকারণেই অনেকটা জটিল করে ফেলি৷ এমনকি অনেক বাবা-মাকেই দেখা যায়, “পান থেকে চুন খসলেই” নিজের শিশুকে অন্য শিশুর সাথে তুলনা করা শুরু করেন।
অন্যের সাথে তুলনা করা মানে শিশুকে তার আত্নবিশ্বাসের জায়গায় অনেক বড় একটা ধাক্কা দেওয়া। এক একটি বাচ্চা এক এক রকম। কেউ চার বছর বয়সে সব অক্ষর রপ্ত করে ফেলে, কেউ আবার দেখা মাত্র অক্ষর চেনা শুরু করে। “অমুকের ছেলে তোমার সমবয়সী তবুও সে সব অক্ষর লিখতে পারে আর তুমি এখনো বলতেও পারোনা ঠিকঠাক ভাবে”। সর্বপ্রথম বাবা-মাকে এমন মনোভাব পোষণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিশুকে বোঝাতে হবে আজকে আমরা অক্ষর বই দেখে পড়তে শিখেছি, কাল মুখস্থ বলতে পারবো।
শিশুকে উৎসাহ প্রদান করা:
উৎসাহ মানুষের কাজ করার আগ্রহকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়৷ যে শিশু সবে কথা বলা শুরু করেছে তাকে ছড়া গল্প শোনাতে হবে। সে নিজ থেকে বলা শুরু করলে তাকে উৎসাহ দিতে হবে৷ তার সামনে পড়াশোনা বিষয়টাকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন সে মনে করে লেখাপড়া খেলারই একটি অংশ।
রুটিন তৈরী করা:
শিশু যখন থেকে বসতে শিখে তখন থেকে উচিত তার সাথে দু’বেলা বই নিয়ে বসা। এতে করে শিশুর মেধা বিকাশের সাথে সাথে তার মধ্যে আপনা-আপনি পড়াশোনার বিষয়ে আগ্রহ জন্মাবে। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। তার সামনে যদি বড়রা সর্বদা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তবে তার মধ্যে মোবাইলের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। আর তার সাথে বই নিয়ে খেললে তার বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে।
শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া:
বাবা-মাকে শিশুর পছন্দের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। সে কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী সেটা সর্বপ্রথম খুঁজে বের করতে হবে। বই কেনার সময় তাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে। তাকে পছন্দ করতে দেওয়া, তার কোন রং এর পেন্সিল, খাতা পছন্দ সেটা জানতে চাওয়া, তার পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া একটি শিশুর আত্নবিশ্বাস, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী বাড়িয়ে জন্য দারুণ এক উপায় হতে পারে।
পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করা:
শিশুদের কার্টুন, রঙ্গিন ছবি এসবের প্রতি অন্যরকম আগ্রহ কাজ করে৷ তাই শিশুকে সর্বপ্রথম ফুল, পশুপাখি এসবের ছবি দেখিয়ে একটা রুটিনে অভ্যস্ত করতে হবে। তারপর তাকে পাঠ্যবইয়ের অক্ষরের সাথে পরিচিত করা যেতে পারে৷ তার পছন্দের কার্টুন চরিত্রগুলোকে নিয়ে পড়াশোনার গল্প করা৷ উদাহরণস্বরূপ, “মিনাকে দেখেছ স্কুলে যায় রোজ৷ তুমি জানো মিনা আজ স্কুলে স্বরবর্ণ শিখেছে। আমরাও আজ স্বরবর্ণ শিখব।”
বাচ্চার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা:
প্রত্যেক বাচ্চাই একে অন্যের থেকে আলাদা৷ কেউ পড়তে পছন্দ করে কেউ আবার লিখতে। কেউ বই নিয়ে খেলতে পছন্দ করে কেউ আবার বিভিন্ন পাজেল নিয়ে। তাই বাচ্চার মনোভাব বুঝে সে অনুযায়ী তার সাথে কাজ করতে হবে। যেমন যে বাচ্চা খেলতে পছন্দ করে তাকে বলতে হবে এই পড়াগুলো যতদ্রুত শেষ করতে পারবো তত তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের খেলা শুরু করতে পারবো। তাড়াতাড়ি পড়াশেষ মানে অনেক বেশি সময় ধরে খেলার সময় পাওয়া।
মিউজিক থেরাপি:
সাধারণত দেখা যায়, কথার চেয়ে গান, কবিতা বাচ্চারা দ্রুত আয়ত্ত করে নেয়। উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত স্কুলে গান, বিভিন্ন ধরনের খেলা, ড্রইং এসবের মাধ্যমের শিশুদের শেখানো হয়। তাই শিশু যদি বই দেখলেই পালাতে চায় তবে তাকে গান, কবিতা এসবের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পড়াশোনায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
পড়াশোনা মানে একগাদা বই আর হোমওয়ার্ক, এমন ধারণা শুরুতেই শিশুর মনে পড়াশোনা সম্পর্কে ভীতির সঞ্চার করতে যথেষ্ট। তার শিশুকে বোঝাতে হবে পড়াশোনা একধরনের খেলা। পড়াশোনার সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমেই যেন একটি শিশুর শিক্ষা জীবনের হাতি-খড়ি হয়।
আরও পড়ুন- শিশুদের খাদ্য তালিকা