চেঙ্গিস খানের জীবনী ও ইতিহাস

আমাদের প্রজন্মের কে শোনেনি চেঙ্গিস খান এই নাম?
চেঙ্গিস মানেই যেন একটা আতঙ্কের নাম। বিশেষ করে যারা চেঙ্গিস খানের উপর সামান্য ধারণাও রাখেন তারাই বুঝতে পারবেন তার নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে। ইতিহাসের অন্যতম অপরাজিত এই জেনারেলের সমকক্ষ পৃথিবীতে মাত্র গুটিকয়েক সমরনায়ক। এককভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অঞ্চল বিজেতা চেঙ্গিস খান চার কোটি মানুষ হত্যার জন্য দায়ী। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও ঘৃণিত ব্যক্তি বলা হয় তাকে।জানা যায় তার সৈন্যরা যে অঞ্চল অতিক্রম করত মানে বিজয় করত তার অবস্থা এমন হতো যেন আগে সেখানে কখনোই কেউ ছিল না।
মানুষজন, পশুপাখি হত্যা সহ গাছপালা পর্যন্ত আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিত চেঙ্গিস খানের সৈন্যরা।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিধ্বংসী এই বিজেতা জন্মগ্রহণ করেন মঙ্গোলিয়ার “স্তেপ”এ । যার বাংলা অর্থ হচ্ছে তৃণ চারণভূমি।ধারণা করা হয় চেঙ্গিসের জন্মস্থান ছিল উত্তর মঙ্গোলিয়ার ‘খেনতি’ পর্বতমালার  অন্তর্ভুক্ত ‘বুরখান’ পর্বতের খুব কাছে।যে জায়গাযর নাম ছিল আবার ‘দেলুন বলদাখ। ১১৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করা এই মোঙ্গল সেনাপতির ‘প্রকৃত নাম ‘তেমুজিন‘ হলেও বিধ্বংসী আচরণের জন্য নিজ সেনাবাহিনীর সদস্যদের থেকে তিনি “চেঙ্গিস খান” উপাধি পান যে নামেই তিনি সারা বিশ্বে পরিচিত। ১২০৬ সালে মঙ্গোলিয়ায় ভয়াবহ রক্তপাতের মাধ্যমে পুরো তৃণভুমির একচ্ছত্র অধিপতি হন চেঙ্গিস খান এবং তখন থেকেই বিশ্ব জয়ের নেশা তাকে পেয়ে বসে।যা তাকে পরবর্তীতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অঞ্চলের বিজেতা ও বেশি মানুষের খুনি হিসেবে পরিচিত করে।চেঙ্গিস খানের ছোটবেলা ছিল ঘটনাবহুল ও রঞ্জিত। তার পিতা ছিলেন স্থানীয় গোত্রের প্রধান। তাই আভিজাত্য ছিল চেঙ্গিস খানের জন্মগত সুত্রে পাওয়া। মঙ্গোল রীতিনীতি অনুযায়ী বারো বছর বয়সেই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। “বোর্তে” নামের এক ফুটফুটে সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ে হয় তার। তবে ছোট্ট তেমুজিনের কপালে সুখ বেশি স্থায়ী হয়নি।সে সময়ের ইউরেশিয়ান স্তেপ অঞ্চলে এখনকার দিনের আধুনিক জাতি রাষ্ট্রের মত একক কোন জাতি বসবাসা করত না। বরং লাখ লাখ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এই তৃণভূমি বিভক্ত ছিল বিভিন্ন গোত্রে গোত্রে, দলে ও উপদলের মাঝে।তাদের সরকার কিংবা আইন কানুন বলতে কিছু ছিল না। গোত্র বা কবিলা তান্ত্রিক সমাজে গোত্রের রীতিনীতিই ছিল চূড়ান্ত। ছিল না পুলিশ অথবা কাজী। ইউরেশিয়ান স্তেপ অঞ্চলে বিভিন্ন তাতার, টার্কিক এবংমঙ্গোল গোত্র বসবাস করত। চেঙ্গিসের জন্মের সময় স্তেপ ভূমিতে ছিল তাতারদের বড্ড আধিপত্য। চেঙ্গিসের পিতা ছিলেন তাতারদের ঘোর শত্রু। মঙ্গোল তথ্য অনুসারে তাতার দের দেওয়া বিষমিশ্রিত ঘোড়ার দুগ্ধ পানে মৃত্য হয়েছিল চেঙ্গিস খানের পিতার।

জীবন যুদ্ধঃ

পিতার মৃত্যুর পর বালক তেমুজিনের নেতৃত্ব মেনে নিতে চায়নি তার গোত্রের লোকজন। তাই একে একে গোত্রের সব মানুষ তাদের পরিবারকে রেখে আলাদা হয়ে চলে যাওয়া শুরু করে। সেই সময়টা ছিল চেঙ্গিস খানের জীবনের সবেচেয়ে কঠিন সময়। বালক চেঙ্গিস পরবর্তী জীবনের রিক্ত পথ চলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন সে সময় থেকেই। শৈশবের প্রতিকূলতা তাকে মজবুত করে গড়ে তুলছিল। চেঙ্গিসের চরিত্রের মধ্যে কঠোরতা বোঝা গিয়েছিল বাল্যকাল থেকেই। যখন মাত্র তের বছর বয়সে নিজের সৎ ভাইকে সামান্য খাবার ভাগাভাগির কারণ নিয়ে হত্যা করে। সতের বছর বয়সে তেমুজিন ঘরে তুলে আনলেন তার বাল্যবধূ বোর্তেকে। জীবনে হাজার হাজার নারীর সঙ্গ আসলেও বোর্তে ছিল তার প্রথম ও শেষ ভালবাসা। অসংখ্য সন্তানের পিতা হওয়া সত্ত্বেও শুধু বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চার ছেলেকেই উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করেছিলেন তিনি। বোর্তে আর তেমুজিনের এই ভালবাসা ইতিহাসে  অনন্য হয়ে বেঁচে আছে, বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চেঙ্গিসের চার ছেলের নাম জোচি, তুলুই, ওদেগিই, চুঘতাই
বোর্তেকে নিয়ে খুব বেশি দিন সুখে থাকা হল না তেমুজিনের। কিছুদিনের মধ্যেই আবারও এল বিচ্ছেদ। প্রতিপক্ষ অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যা করল তেমুজিনের গোত্রের লোকদের সেই সাথে তুলে নিয়ে গেল বোর্তেকেও। এই ঘোর বিপদে তেমুজিন পিতৃবন্ধু তুঘরুল খানের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তুঘরুল খান ছিলেন এক শক্তিশালী গোত্র প্রধান এবং চেঙ্গিসের পিতার রক্তের ভাই। সেকালে মঙ্গোলরা ছোটবেলায় ব্লাড ব্রাদার বা রক্তের ভাই সম্পর্কে আবদ্ধ হতেন হাত কেটে রক্ত বিনিময় করে । বোর্তেকে উদ্ধার করতে চেঙ্গিস সাহায্য চাইলেন তার নিজের সেরকম ই ‘রক্তের ভাই’ জমুখার কাছে। অবশেষে উদ্ধার করা হয় বোর্তেকে এবং ফিরিয়ে আনার পর জন্ম নেয় চেঙ্গিসের বড় ছেলে ‘জোচি‘। কিন্তু শত্রু শিবির থেকে বোর্তের মুক্ত হওয়ার মাত্র নয় মাস পর জন্ম হওয়ায় জোচির পিতৃ পরিচয় নিয়ে শুরু হয় কটুক্তি। তবে চেঙ্গিস আজীবন জোচিকে নিজের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন।

চেঙ্গিস খানের উত্থানঃ

আস্তে আস্তে জমুখা ও তুঘরুল খানের সহযোগিতায় শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন তেমুজিন। চেঙ্গিস আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের সাম্রাজ্য চারবার দখল করেন।তবে উচ্চাভিলাষী তেমুজিন প্রস্তুত হচ্ছিলেন আরো বড় কোনো সাম্রাজ্যের মালিক হওয়ার জন্য। তিনি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের জন্য বংশ পরিচয়ের চেয়ে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতেন যেটা ছিল মঙ্গোল রীতিবিরুদ্ধ এবং তার রক্তের ভাই জমুখার কাছে খুবই অপছন্দনীয়। তাছাড়াও দুইজনেরই চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল একাধিপত্য কায়েম করা। তাই দুজনের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য কারণ হয়ে দাঁড়াল। এককালে তেমুজিনের রক্তের ভাই জমুখা পরিণত হলো চেঙ্গিসের ঘোর শত্রুতে।তবে চূড়ান্ত মীমাংসা পেতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হল না। চেঙ্গিস খানের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটল ১২০৬ সালের দিকে অর্থাৎ চেঙ্গিসের বয়স যখন মোটামুটি ৩৫ বছর। মঙ্গোলিয়ান স্তেপ তখন দুই শিবিরে বিভক্ত। একদিকের নেতৃত্বে চেঙ্গিস অন্যদিকে জমুখা। তেমুজিনের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জমুখার পরাজয়ের পর জমুখার লোকেরাই তাকে চেঙ্গিসের হাতে তুলে দেয়। তবে চেঙ্গিস খানের কাছে সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ ছিল “বিশ্বাসঘাতকতা।”
 জমুখার যে জেনারেলরা চেঙ্গিসের কাছে পুরস্কৃত হওয়ার আশায় তাদের নেতাকে তুলে দিয়েছিল শত্রুর কাছে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতি হয়েছিল খুবই ভয়ঙ্কর। চেঙ্গিস তাদের সবাইকে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জমুখাকে তার নিজের ইচ্ছা অনুসারেই মঙ্গোল রীতি অনুসাতে পিঠ ভেঙে হত্যা করা হয়েছিল। যদিও চেঙ্গিস জমুখাকে হত্যা করতে চা, নিজেই পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়নি আর। জমুখাকে পরাজিত করার পর মঙ্গোলিয়ার বাকি গোত্রগুলোও একে একে চেঙ্গিসের বশ্যতা মেনে নিতে থাকে। সে বছরই তাকে ‘চেঙ্গিস খান’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

রাজ্য জয়ঃ

চেঙ্গিস খান” হওয়ার পর তেমুজিন আরও ২১ বছর বেঁচে ছিলেন আর সেটাই ছিল তার জীবনের স্বর্ণযুগ। সেই সময়ের মধ্যে তিনি জয় করেছিলেন চীন, ভারত, ইউরোপ ও এশিয়ার প্রায় এক কোটি বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চল। এছাড়া আফগানিস্তান হয়ে ভারতের ‘পাঞ্জাব’ পর্যন্ত চলে এসেছিল মঙ্গোল বাহিনী। ককেশাস ও কৃষ্ণসাগরের আশে পাশের অঞ্চলগুলোও একে একে অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে চেঙ্গিস সাম্রাজ্যের। ইউরোপে চেঙ্গিসের জয়রথ পৌঁছেছিল বুলগেরিয়া হয়ে ইউক্রেন পর্যন্ত। অবাক করা ব্যাপার চিরকাল অজেয় রাশিয়া জয় করতে চেঙ্গিস খানের বাহিনীর একটুও বেগ পেতে হয়নি।
এত মানুষের হত্যাকারী চেঙ্গিস খান দুনিয়ার কাউকে ভয় না পেলেও একজন মুসলিম সেনাপতিকে যমের মত ভয় পেতেন। শুনতে অবাক মনে হলেও সেই সেনাপতির ভয়ে চেঙ্গিস খান যুদ্ধের ময়দানে নিজ পুত্রকে প্রতিপক্ষ হিসেবে এগিয়ে দিয়েছিলেন এই চেঙ্গিস খান। কথিত আছে ইরানের রাজপুত্র “রশিদ আল-দ্বীন”এক সাথে চেঙ্গিস খানের জামাতার লড়াই হয় এবং রশিদ তাকে হত্যা করেন। উক্ত হত্যার প্রতিশোধ নিতে চেঙ্গিস খান ইরানের উপর যে আক্রমণ চালিয়েছিলেন তা আজও পর্যন্ত ইরানের ইতিহাস সবচেয়ে বড় মানববিধ্বংসী আক্রমণ।শোনা যায় ইরানি সৈন্যদের হত্যার পর তাদের প্রত্যেকের মস্তক দেহ থেকে আলাদা করে একজায়গায় রেখে মস্তিষ্কের পাহাড় বানিয়েছিলেন চেঙ্গিস খানের সৈন্যরা,যার প্রতিটি ইট ছিল একেকটা মাথার খুলি।
কিন্তু দিনশেষে তেজোদীপ্ত সূর্য যেমন ম্লান হয়ে পড়ে তেমনিভাবে চেঙ্গিস খান ও এক মুসলমান সেনাপতির ভয়ে কাঁপতেন। তার নাম ছিল “সুলতান জালালুদ্দিন খাওয়ারিজম শাহ”। মুসলিম বিশ্বের বাঘ নামে পরিচিত ছিলেন যিনি যার হুংকারের আওয়াজ চেঙ্গিস খানের হৃদয়ে আতংকের সৃষ্টি করত। চেঙ্গিস খান তার জীবনীতেও লিখে গিয়েছেন,’ এই পুরো পৃথিবীতে আমি আমার প্রতিপক্ষ কেবল একজনকেই মনে করি যার নাম হচ্ছে খাওয়ারিজম শাহ্!’ তিনি আরো বলেছিলেন সেই পঁচিশ বছরের যুবককে তিনি যতবার দেখেছেন ততবার ই তার মনে হয়েছিল এরকম একটি পুত্র তার থাকলে পুরো পৃথিবীতে তার প্রতিপক্ষ বলে আর কেউ থাকত না।

জীবনাবসানঃ

পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের বিজেতার মৃত্যু হয় ১২২৭ সালে। তখন তিনি চীনে অভিযান চালাচ্ছিলেন। তার মৃত্যু নিয়ে যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, ঘোড়া থেকে পড়ে মারা গেছেন। এ ছাড়াও যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হন বলেও যুক্তি-প্রমাণ রয়েছে। তবে কোনোটিই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়নি।চেঙ্গিস খানের সমাধি কোথায় সেটা কেউই জানেনা। কারণ তার শেষকৃত্যে যারা উপস্থিত ছিল সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল এবং হত্যাকারীদেরও আত্মহত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।সবশেষে চেঙ্গিস খানের সমাধির যেন কোনো প্রমাণ না থাকে তাই সমাধির উপর ১ হাজার ঘোড়া নিয়ে ঘোড়সাওয়াররা দৌড়ায়। ওইসব ঘোড়সাওয়ারদেরও পরবর্তীতে হত্যা করা হয়েছিল। কোনো ধরনের প্রমাণই মেলেনি চেঙ্গিস খানের সমাধির।তাই আজ পর্যন্ত চেঙ্গিসের সমাধি এক অজানা রহস্য। মূলত চেঙ্গিসের উত্তরাধিকারীরাই সেটা গোপন রাখেন। মঙ্গোলিয়ানদের কাছে চেঙ্গিস খান এক মহানায়ক। তাঁর কর্মের মহত্ত্ব আজও মঙ্গোলিয়ানরা হৃদয়ে ধারণ করে। মঙ্গোলিয়ানদের হৃদয়জুড়ে শ্রদ্ধার আসনে আছেন এই বীর সেনা। তাই তারা তাঁর সমাধি খোঁজ করতে চায় না। বলা হয়, চেঙ্গিস খানের সমাধিটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনাবিষ্কৃত এবং অক্ষত,অর্ধেক পৃথিবীর ধনসম্পদে ঠাসা একটি রত্নভাণ্ডার! এটি মোটামুটি নিশ্চিত যে চেঙ্গিস খান সারাজীবনে যে পরিমান ধনসম্পদ এবং রত্ন লুট করেছেন, তার পুরোটুকুই সমাধিক্ষেত্রে চেঙ্গিস খানের সাথে রেখে দেওয়া আছে। জয় করা ৭৮ জন রাজার মুকুট সেখানেই আছে বলে ধারনা করেন অনেকে।
চেঙ্গিস খান নিজের প্রতিকৃতি আঁকা পছন্দ করতেন না। তাই চেঙ্গিস খানের কোন আসল ছবি নেই। যেগুলো তার ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া হয় সেগুলো আসলে পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের কল্পনায় আঁকা মাত্র। নিজের জীবন কাহিনী তিনি তার জীবদ্দশাতেই লিপিবদ্ধ করার আদেশ দেন। যা ‘Secret book of Mongols ’ নামে পরিচিত।
বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, চেঙ্গিস খানের কারণে ৭০ কোটি টন কার্বন বায়ুমণ্ডল থেকে অপসারিত হয়েছিল। সাম্রাজ্য বিস্তারে চেঙ্গিস খান যে হত্যাযজ্ঞ চালান, তাতে অনেক এলাকা মানবশূন্য হয়ে পড়ে। ওই এলাকাগুলোতে কৃষিজমি ও বসতবাড়িতে গাছপালা জন্মে ক্রমে তা বনজঙ্গলে পরিণত হয়। অনেক এলাকা হয়ে যায় গহীন অরণ্য। এসব বনজঙ্গলের গাছপালা বায়ুমণ্ডল থেকে বিপুল পরিমাণ পরিবেশ দূষণকারী কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়। যদিও এই প্রক্রিয়া মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় তবে পরিবেশবিদদের মতে, চেঙ্গিস খানের এই প্রক্রিয়াই পরিবেশ শীতল রাখার ক্ষেত্রে প্রথম মানবসৃষ্ট উপায়। তবে ৭০ কোটি টন কার্বন হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি শুনতে যত চমকপ্রদ মনে হচ্ছে, ঘটনা আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। কারণ আধুনিক বিশ্বে এক বছরে যে পরিমাণ পেট্রল পুড়ছে তাতে করে ৭০ কোটি টনেরও বেশি কার্বন প্রতি বছর পৃথিবীতে নিঃসরিত হচ্ছে ক্রমাগত। সুতরাং চার কোটি মানুষ হত্যা করে পৃথিবীর জলবায়ুর উন্নয়নে সত্যিকার অর্থে তেমন কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেননি চেঙ্গিস খান। এছাড়াও বাংলা সনের প্রবর্তন যিনি করেন তিনি কোন বাংলাভাষী বা বাংলাদেশি নন। তিনি ছিলেন বিশ্বখ্যাত চেঙ্গিস খান ও মহাবীর তৈমুর লং-এর সুযোগ্য বংশধর বিশ্ববিখ্যাত মোঘল সম্রাট “আকবর দি গ্রেট” সুদূর দিল্লীতে রাজসিংহাসনে থেকেই তিনি এ দেশে বাংলা সন প্রবর্তন করেন। পৃথিবীর অন্যান্য আদর্শ-বিহীন সাম্রাজ্যের মতো তার আদর্শহীন জুলুমের সাম্রাজ্য মাত্র ১৫০ বছরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *