ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির সংক্ষিপ্ত জীবনী

বিশ্ব ফুটবলে যে সব খেলোয়াড় নিজেদেরকে আলাদা করে চিনিয়েছেন, লিওনেল মেসি তাদের মধ্যে অন্যতম। একের পর এক গোল করে গ্রেটদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়া মেসি যেন ছাড়িয়ে যান নিজেকেও। অসাধারণ ফুটবল স্কিলের কারণে বিশ্লেষকেরা তাকে ভিনগ্রহের ফুটবলার বলেই আখ্যা দিয়েছেন। তিনি যখন মাঠে নামেন, নিজ দলের সমর্থকেরা তো বটেই প্রতিপক্ষের সমর্থকেরাও অপেক্ষা করতে থাকেন এই বুঝি তারা সাক্ষী হতে চলেছে কোন এক স্মরণীয় মুহূর্তের।

লিওনেল মেসির পূর্ণ নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। তিনি ১৯৮৭ সালের ২৪শে জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ফুটবলের এই মহা তারকার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি।

লিওনেল মেসির পরিবার

মেসির বাবা হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন খন্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মেসি তৃতীয়। বড় দুই ভাইয়ের নাম রোদ্রিগো এবং মাতিয়াস। ছোট বোনের নাম মারিয়া সল। ২০১৭ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া মেসি ও রোকুজ্জ একত্রে বসবাস শুরু করেন ২০০৮ সাল থেকে।

খেলার পজিশন

লিওনেল মেসি কৌশলগতভাবে আক্রমণ ভাগে খেলে থাকেন। তবে দলের প্রয়োজনে কিংবা প্রতিপক্ষকে তাদের গেম থেকে বিচ্যুত করার জন্য তিনি প্লে-মেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। লিওনেল মেসি সাধারণত মধ্য মাঠ দিয়ে আক্রমণ করতে পছন্দ করেন।

ক্লাব ক্যারিয়ার

২০০৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা বার্সেলোনা মূল দলে খেলেছেন তিনি। এ সময় বার্সেলোনার হয়ে ৫২০ ম্যাচ থেকে করেছেন ৪৭৪ গোল। এরপর ২০২১ মেসি পাড়ি জমান ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে। যদিও পিএসজিতে মেসির অভিজ্ঞতা সুখের হয়নি। ২০২২ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই মেসির পিএসজি ছাড়া গুঞ্জন ছড়িয়ে পরে। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জন সত্যি হয়ে মেসি পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ক্লাব ইন্টার মিয়ামিতে

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট হাঙ্গেরির বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষিক্ত হন মেসি। ওই ম্যাচের ৬৪ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে মাত্র ২ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখেন। জাতীয় দলের হয়ে ফুটবলের এই বরপুত্র এখন পর্যন্ত ১৭৩ ম্যাচে গোল করেছেন ১০২টি।

ফিফা বিশ্বকাপে সাফল্য

আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির বলার মতো সাফল্য একটা সময় পর্যন্ত ছিল না। বারবার ফাইনাল খেললেও আর্জেন্টিনার হয়ে কোন ট্রফি জেতা হচ্ছিল না ফুটবল জাদুকরের। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে ট্রফি ছোঁয়ার নিঃশ্বাস দূরত্ব থেকে ফিরে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন মেসি। রানার্স আপ হয়ে খুশি থাকতে হয় সেবার। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে জার্মানির বদলি খেলোয়াড় মারিও গোটজের শেষ সময়ের গোলে স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার। অবশেষে নিজের শেষ বিশ্বকাপে অর্থাৎ ২০২২ বিশ্বকাপে একের পর এক শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ জয় করে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিতে চুমু দেয়ার সৌভাগ্য হয় লিওনেল মেসির।

কোপা আমেরিকা সাফল্য

মেসির নেতৃত্বে ২০২১ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকা জয়লাভ করে আর্জেন্টিনা। এছাড়াও ২০১৯, ২০১৬, ২০১৫ এবং ২০০৭ সালে মর্যাদাপূর্ণ এই টুর্নামেন্টের রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে আর্জেন্টিনা। ২০২২ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত উয়েফা কাপ অব চ্যাম্পিয়ন্স নামে আয়োজিত ইউরোপ সেরা এবং লাতিন সেরা দলের মধ্যে সংঘটিত ম্যাচে ইতালিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তার দল। এছাড়াও ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক এবং ২০০৫ সালের ফিফা অনূর্ধ্ব ২৩ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন লিওনেল মেসি।

মর্যাদাপূর্ণ ব্যালন ডি’অর ও অন্যান্য পুরস্কার

মেসি একমাত্র প্লেয়ার যিনি টানা ৪ বারসহ মোট ৭ বার ব্যালন ডি’অর জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন যা ফুটবল ইতিহাসে আর কোনো খেলোয়াড় করেতে পারেনি। ২০২২ বিশ্বকাপ জেতায় ২০২৩ সালেও এ পুরস্কার পাওয়ার দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন এই কিংবদন্তি। যদি তাই হয় তবে তার ব্যালন ডি’অর সংখ্যা হবে ৮টি। মেসি যথাক্রমে ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১, ২০২১ সালে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার লাভ করেন।

মেসি সর্বোচ্চ ৬ বার ইউরোপীয় গোল্ডেন বুট অর্জনের কৃতিত্ব লাভ করেন। পেশাদার ফুটবলের প্রায় সবটা সময় বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবে কাটানো মেসি ১০টি লা-লিগা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং কোপা দেলরেসহ মোট ৩৩ টি শিরোপা জয় করেন। বার্সেলোনার ইতিহাসে অন্য কোন প্লেয়ার এই কৃতিত্ব অর্জন করতে সমর্থ্য হন নি।

মোট গোল সংখ্যা

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৪ ম্যাচে ১০২ গোল করা আর্জেন্টাইন তারকা লা লিগায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৪০ গোল, লা লিগা ও ইউরোপের যে কোনো লিগে এক মৌসুমে ৫০ গোল, এক পঞ্জিকা বর্ষে সর্বোচ্চ ৯১ গোল, এল-ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৬ গোল এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ৮টি হ্যাট্রিকের কৃতিত্ব অর্জন করেন। প্লে-মেকার হিসেবে তিনি লা লিগায় ১৮৩ এবং কোপা আমেরিকায় সর্বোচ্চ ১২ গোলে সহায়তা করেন। জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে এখন পর্যন্ত তিনি ৭০০ এর বেশি গোল করেছেন।

আরও পড়ুন- বিশ্বকাপ ও লিওনেল মেসি: সাধারণ থেকে সর্বকালের সেরা

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *