শিশুদের খাদ্য তালিকা

কথায় আছে, নারী জীবন পূর্ণতা লাভ করে মাতৃত্বের মাধ্যমে। ছোট সদ্যোজাত শিশু পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়া মানে একজন নারীর “মা” হিসেবে নতুন পথচলার সূচনা। শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর যেন মায়েদের মাথায় ” শিশুর খাবার তালিকা,” “শিশুর খাবারে রেসিপি ” এই সব বাক্য ঘুরপাক খেতে থাকে। আর যদি শিশুর খাবারে অরুচি হয় তবে বর্তমান মায়েদের অনেকটা সময় কেটে যায় ইউটিউবে “শিশুর খাবারের রেসিপি,” “শিশুর খাবারের ভিডিও” এই সবের সন্ধানে। শিশুদের খাবারের রুটিন কেমন হওয়া উচিত এটি নিয়েও অনেক মায়ের মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। শিশুদের খাদ্য তালিকা নিয়ে সাজানো আমাদের আজকের আর্টিকেল।

৬ মাস থেকে ৮ মাস বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা:

৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রধান খাবার হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। ৬ মাস বয়সের পর থেকে পরিপূরক খাবার হিসেবে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দেওয়া শুরু করতে হয়। তবে, এই বয়সী একটি শিশুর ওজন জন্মের সময়ের ওজনের দ্বিগুণ হয় (কমপক্ষে ১৩ পাউন্ড)। অনেক সময় দেখা যায় মা শিশুকে কোলে শোয়ানো অবস্থায় খাওয়ানোর চেষ্টা। এটি শিশুর জন্য বিপদজনক হতে পারে। শিশু বসতে শিখলে তাকে হাইচেয়ারে বসিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে৷ এতে করে শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে।

যা যা খাওয়ানো যাবে:

  • ব্রেস্ট মিল্ক/ ফর্মুলা মিল্ক।
  • ভাত।
  • খিচুড়ি।
  • ফ্রুটস পিওরি (কলা, আপেল, নাশপতি ইত্যাদি)।
  • সবজি পিওরি (গাজর, মিষ্টিকুমড়ার, মিষ্টি আলু)।
  • সিদ্ধ মুরগী বা গরুর মাংস। চাইলে অল্প তেল মসলায় রান্না করে দেওয়া যেতে পারে৷ তবে চিকিৎসকেরা এক বছর আগে শিশুর খাবারে লবণ ব্যবহার নিষেধ করে থাকেন।
  • সামান্য পরিমাণে পাস্তুরাইজড চিজ।
  • ওটসের তৈরি সেরেলাক, গমের সুজি, সাগু। চালের তৈরি সেরেলাক পরিহার করা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। চিকিৎসকেরা এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে শিশুর খাবারে  চিনি ও গরুর দুধ ব্যবহার করতে নিষেধ করে থাকেন৷ গরুর দুধের পরিবর্তে ফর্মুলা মিল্ক আর চিনির পরিবর্তে খেজুর চিনি, বাদাম গুড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিশুদের দিনে কতবার খাওয়ানো যাবে?

বুকের দুধ বাচ্চা যতবার খেতে চায় ততবার খেতে দিতে হবে। অনেক মায়েরা দেখা যায় শিশুকে ঘুম থেকে উঠামাত্র বুকের দুধ দেওয়ার সাথে সাথেই খাবার খাওয়ানোর জন্য জোরাজোরি শুরু করে দেন। শিশুকে ঘুম থেকে উঠার পর খাবার খাওয়ানো কিছুক্ষণ পর বুকের দুধ দিতে হবে নয়তো বুকের দুধ খাওয়ানোর কিছু সময় পর খাবার দিতে হবে।

  • সলিড ফুড শুরু করার পর প্রথমদিকে শিশু হয়তো খেতে না চাইতে পারে। তাই শিশুকে জোরাজোরি না করে সর্বপ্রথম তার খাবারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। ডাক্তারের মতে শিশুকে কোন খাবার দেওয়া শুরু করলে প্রথম তিন দিন টানা দিতে হবে। এতে করে বোঝা যাবে শিশুর সে খাবারে এলার্জি বা বদহজমের সমস্যা হচ্ছে কিনা৷
  • সলিড খাবার শুরুর পর শিশুকে প্রথম দিকে ১-২ চামচ খাওয়াতে হবে৷ পরবর্তীতে শিশু অভ্যস্ত হয়ে গেলে ফ্রুট, সবজি পিওরি ২-৩ চামচ থেকে শুরু করে ৬- থেকে আট চামচ পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে৷ আর হাই-প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ১-২ চামচ থেকে শুরু করে ৪-৫ চামচ পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে।

৯ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা:

এসময় শিশুকে পিওরির পরিমাণ কমিয়ে বিভিন্ন রকম সবজি ছোট টুকরো করে সিদ্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। সাথে বিভিন্ন ফলমূল ছোট ছোট টুকরো করে যদি বাটি আর চামচ করে তার সামনে দেওয়া হয় এতে করে তার মধ্যে নিজ হাতে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে৷ ১ বছর পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুকে ডিমের সাদা অংশ বাদ দিয়ে শুধু মাত্র কুসুম দিতে হবে। অনেক বাচ্চারা মাছ খেতে চায় না। তবে মাছ রান্নার পূর্বে মাছের গায়ে লবণ ও  লেবুর রস মেখে রাখলে মাছের আঁশটে গন্ধ অনেকাংশে কমে যায়।

দিনে কতবার খাওয়ানো যাবে?

১/২ থেকে ৩/৪ কাপ ফলমূল।

১/২ থেকে ৩/৪ কাপ সবজি।

১/২ থেকে ১/৪ কাপ সেরেলাক ।

১/২ থেকে ১/৪ কাপ উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।

এক বছরের বয়সের পূর্বে যে সকল খাবার শিশুর জন্য ক্ষতিকর:

লবণ, চিনি ও মধু।

গরুর দুধ।

ফলের জুস৷

অপরিশোধিত খাবার৷

বাইরের অতিরিক্ত চিনি, সোডিয়াম মিশ্রিত খাবার।

ফিডিং টিপস:

শিশুকে খাবার নিয়ে কখনোই জোরাজোরি করা উচিত নয়। অনেক শিশু দেখা যায় খুব অল্প পরিমাণে খায়। সেক্ষেত্রে তাকে একবারে অধিক পরিমাণে খেতে না দিয়ে একটু পর পর অল্প পরিমাণে খেতে দিতে হবে। ৮ মাস বয়সের পর পিওরির পরিমান কমিয়ে ধীরে ধীরে শক্ত খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। নয়তো বা পরবর্তীতে শিশুর চিবিয়ে খেতে সমস্যা হতে পারে। যখন শিশুকে নতুন কোন খাবার খেতে দেওয়া হবে তখন মাকে সে খাবার সম্পর্কে শিশুর সামনে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা উচিত যাতে শিশুর সে খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্মায়৷ সবেচেয়ে ভালো শিশুকে পরিবারের সকল সদস্যের সাথে খাবার টেবিলে বসে খেতে দিলে৷

আরও পড়ুন- বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার, সন্তানের উপরে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রভাব

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *