বাংলাদেশের-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
August 16, 2023
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরোনো।সপ্তম শতাব্দীতে লেখা বৌদ্ধ দোহার সংকলন চর্যাপদ বাংলা ভাষায় প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। মধ্যযুগে বাংলা ভাষার পালাগান ও লোকগীতির প্রচলন শুরু হয়। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যের কাব্য ও গদ্যের প্রচলন শুরু হয়।
প্রত্যেক দেশ বা জাতীর একটি নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রয়েছে। এই সংস্কৃতির মাধ্যমেই জাতীয় জীবনকে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেক দেশ ও জাতি তাদের নিজস্ব পরিচয় ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে।আর সংস্কৃতির মাধ্যমেই জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ও আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে প্রত্যেক জাতির গৌরবময় দিক ফুটে ওঠে। মূলত একটি জাতীর স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব,চিন্তা- চেতনা,শিল্পকলা, সাহিত্য সবই সংস্কৃতির একটা অংশ।প্রত্যেক দেশ ও দেশের মানুষের মধ্যে ই সংস্কৃতির চর্চা রয়েছে।
সংস্কৃতি :
সংস্কৃতির খাটি বাংলা হচ্ছে কুষ্ঠি।অর্থ হলো কর্ষন। সংস্কৃতির ইংরেজি হলো culture। সংস্কৃতি সনাক্তকরণের কোন মানদ বৈশিষ্ট্য বা গন্ডি নেই।সমাজতত্ববিদ জনিস বলেন “মানুষ যা সৃষ্টি করে তার সামগ্রিক রূপই হলো সংস্কৃতি”।
সংস্কৃতির ধারক পাড়া গাঁ:
পল্লীগ্রামই মূলত সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।বাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের পল্লীঅঞ্চল। পাড়াগাঁয়ে প্রতিবেশিদের মধ্যে আত্নীয়তা,মমত্ববোধ, তাদের আচার আচরন,রীতি নীতি,পোশাক পরিচ্ছেদ,প্রথা, উৎসব,সব কিছুর মধ্যেই সমজাতীয়তা ও পারস্পরিক আত্নিক সংযোগ প্রকাশ পায়। পল্লী গ্রাম গুলোই আমাদের সমাজ সংস্কৃতি ঐতিহ্য সব কিছু ই যত্ন করে রেখেছে। পল্লী জীবনের এই সামাজিক আচার ব্যবহারের সমষ্টি ই হলো বাংলার ঐতিহ্য।শীতের পিঠাপুলি উৎসব,পহেলা বৈশাখ, নবান্না উৎসব,পৌষমেলা,লোকগীতি,ভাওয়াল ভাটিয়ালী, জারি সারি,এবং বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা বাংলার ঐতিহ্যের প্রকাশ করে। বাংলাকে সুন্দর করার জন্য এগুলো অনেক ভূমিকা পালন করে।
বাংলা সংস্কৃতির ভিত্তি:
একটি জাতির সংস্কৃতি তার ভৌগলিক পরিবেশ, ধর্মীয় রীতিনীতি,সামাজিকরিতী,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাঙালি জাতীর সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষ্ত্র এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলার সংস্কৃতি তে পোশাক, পরিচ্ছেদ তাদের জীবনকে নতুন ও সহজ করে দিয়েছে। বাংলার মানুষ তার সংস্কৃতি মেনে চলে এবং তাদের সংস্কৃতির দ্বারা অব্যাহত রাখছে।মনেপ্রানে লালন করে নিয়েছে। গেঁথে নিয়েছে মনের মধ্যে বাংলার সংস্কৃতি।
বাংলা সংস্কৃতির ধরন:
বাংলার সংস্কৃতিকে ড.ওয়াকিল তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন-
১|বাংলার নগর সংস্কৃতি : শহরের মানুষের যান্ত্রিক জীবন চার দেয়ালের মাঝে বন্ধী এবং তাদের নিজেদের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে বিদেশী সংস্কৃতি লালন করে। শহরের সংস্কৃতি হলো মিশ্র সংস্কৃতি।
২|বাংলার লোক সংস্কৃতি : লোক সংস্কৃতি হলো গ্রাম বাংলার মানুষের সংস্কৃতি। তারা নিজেদের সংস্কৃতি নিয়েই রয়েছে নিজের সংস্কৃতি লালন করছে এবং এই সংস্কৃতির আধুনিকায়ন করছে। বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব তাদের উপর পরে নি।
৩|আদিম সংস্কৃতি : এরা পুরা বাংলার সংস্কৃতি রীতিনীতি প্রথা সব মেনেই চলে। উন্নত দেশ হলেও তারা সেই প্রাচীন যুগের মতোই নিজেদের সংস্কৃতি নিয়েই আছে তার কোন পরিবর্তন করেনি। যা ছিলো তাই নিয়েই আছে এবং সেই সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা চলতেছে।
বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্য :
বাংলার প্রকৃতি ও সমাজজীবনের সাথে তাল মিলিয়ে এখনকার সংস্কৃতির জীবনধারার বিকাশ ঘটেছে। এখানে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই মিলে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে পরস্পরের সাথে তারা আনন্দ ভাগ করে নেয়। একের উৎসব অনুষ্ঠানে অন্যরা আসে যেমন:লোকগীতি,ভাওয়াল,জারিসারি, পিঠাউৎসব,পহেলা বৈশাখ এমন সব অনুষ্ঠানে প্রত্যেক ধর্মের মানুষই অংশ নেয় এবং তারা তাদের সংস্কৃতি ধরে রাখে। আবার খেলাধুলা যেমন হাডুডু,গোল্লাছুট, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, ইত্যাদি খেলার প্রচলন এখনও রয়েছে।নকশীকাঁথা আমাদের সংস্কৃতির বড় একটা অংশ।গ্রামের মহিলারা অবসরে কাঁথার উপর হাতে যে নকশা তৈরি করে এগুলোই বাংলার সংস্কৃতি। আরও রয়েছে জামদানি শাড়ি। মেয়েদের পছন্দ আবেগ এখানেই থাকে। তবে আগের দিনের মতো এত বেশি প্রচলন দেখা যায় না। মানুষ সব শহরমুখী হয়ে যাচ্ছে। যৌথ পরিবার ভেঙে মানুষ একক পরিবার গড়ে তুলছে। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের উচিত নিজের সংস্কৃতি মনেপ্রানে লালন করা।
সংস্কৃতির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন:
বাঙালী জীবনবোধের উপর গড়ে উঠেছে আমাদের সংস্কৃতি। তবে বিভিন্ন সময়ে আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়েছে।মূলত বিভিন্ন সময়ে শাসন করে আসা বিদেশী লোকগুলো তাদের সংস্কৃতি বাংলায় রেখে গেছে আমরা বাঙালি মানুষ তাদের সংস্কৃতি লালন করি নিজের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে।
বাংলা সংস্কৃতির অবক্ষয় :
আজকের দিনে বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবক্ষয় সুস্পষ্ট সমাজের সর্বস্তরে অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব সমগ্র জাতিকে গ্রাস করেছে। শিক্ষার নামে নৈতিকতাবিহীন কুশিক্ষা আর সমাজ সেবার নামে। দলাদলি চলছে।রাজনীতির নামে কাদাছোড়া ছুড়ি, সংগীতের নামে বহুভাষায় মিশ্রনের সুর তাল, পোশাক পরিচ্ছেদ পশ্চিমা অনুকরন আর চিত্ত বিনোদনের ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় যৌনতা যা আমাদেরকে এমনভাবে গ্রাস করে তুলেছে যে আমরা কোনভাবেই এই সংস্কৃতি ছেড়ে নিজের সংস্কৃতিতে আসতে পারিনা।
বাংলার সংস্কৃতি ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা প্রত্যেকটা মানুষের দায়িত্ব।আমরা সবাই আমাদের সংস্কৃতিতে ফিরে আসবো। বিদেশী সকল সংস্কৃতি ভুলে নিজ সংস্কৃতিতে মনোনিবেশ করবো। আমাদের সমাজের প্রতিটা মানুষকে বুঝাতে হবে আমার দেশের সংস্কৃতি সুন্দর এই সংস্কৃতি নিয়ে থাকো। আমাদের সংস্কৃতি স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে আয়োজন করা সকল অনুষ্ঠান মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
দেহের জন্য যেমন প্রান তেমনি জাতির জন্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো রক্ষা করা চর্চা করা সবকিছু আমাদের দায়িত্ব। সংস্কৃতি আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। আর বাঙালির এই গর্ভ বাংলার বহুকালের সংস্কৃতি। বাংলার সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে এবং বিশেদী সংস্কৃতিকে মন থেকে মুছে ফেলতে হবে।বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা সংহতকরনের মাধ্যমে ত্বরান্বিত হবে দেশের সামাজিক উন্নয়ন।