বাল্যবিবাহ কি? বাল্যবিহারের প্রভাব
বাল্যবিবাহ হল অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিবাহ। আইনত বিয়ের বয়স ১৮ বৎসর, বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে। কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে অভিবাবকের অনুমতি সাপেক্ষে এই বয়সের আগেও বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়। বাল্যবিবাহ আমাদের সমাজের খুব ভয়ানক এক ব্যাধি। এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
বাল্যবিবাহের কারণ:
বাংলাদেশের হাজারো মানুষের পারিবারিক অসচ্ছলতার কারনে তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয় বা বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো না থাকার জন্য তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।এমতাবস্থায় একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।না হয় পড়াশোনা,না হতে পারে একটা পরিপূর্ণ মানুষ।সামাজের মানুষের কাছেও তারা খারাপ বলে বিবেচিত হয়।এজন্য আমাদের সকলের উচিত প্রতিটা শিশুকে শিক্ষার আলো দেখানো। তাদের সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করা।
বাল্যবিহারের প্রভাব:
অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে যখন বিয়ে করে একসাথে থাকে তখন তাদের মধ্যে যৌন মিলন হয়।মেয়েটা যখন মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক একটা মেয়ে যখন গর্ভে সন্তান ধারন করে তখন মেয়েটার জীবনের ঝুকি থাকে। তার গর্ভে থাকা সন্তানও বাঁচবে কিনা এটা নিয়ে পরিবার চিন্তিত থাকে। বাংলাদেশের গ্রামীন অঞ্চলের মানুষ এসব সম্পর্কে ধারনা না থাকার কারনে তারা ছেলে মেয়েকে বিয়ে দেয় কিন্তু এগুলো চিন্তা করার সময় থাকে না তাদের।
জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বাল্যবিবাহের প্রভাব:
১৯৭৪ সালে জনসংখ্যা ছিল সাত কোটি ৬৪ লাখ। আর ২০১১ সালে এ দেশের জনসংখ্যা হয়েছে ১৪ কোটি ৯৭ লাখ। অর্থাৎ এই ৩৭ বছরে (১৯৭৪-২০১১) বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বর্তমানে তা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
এভাবে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভাব ফেলছে সর্বত্র। ক্রমে ক্রমে তা আরও খারাপের দিকে যাবে। এ ব্যাপারে কিছু মানুষ দেখা যায় খুবই সচেতন। আবার এক শ্রেণীর মানুষ এ ব্যাপারে একেবারেই অসচেতন। পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে মানুষ কিছুটা জানার পরেও তাদের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।মাঠপর্যায়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।
অপ্রাপ্তবয়স্কে বিয়ে হওয়ার কারনে তাদের মধ্যে যৌন মিলনের ফলে বাচ্চা হওয়ার বিষয়টা সম্পর্কে ততটা ধারনা না থাকার কারনে প্রতি বছরেই তাদের বাচ্চা হওয়ার প্রবনতা বেড়েছে। তাদের সচেতন হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার তৈরি করেছে পরিবার পরিকল্পনা। যেখানে এই সব কিছু ডিটেইলস আলোচনা হয়।জনসংখ্যা বাড়ার কারন মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের মা হওয়া।আমাদের সরকার কর্তৃক ঘোষনা আছে”দুটির বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়”সরকার এমন কথা বলার পরেও আমরা অসচেতন হয়ে থাকি।জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বেড়েছে বেকারত্বও।পরিবারের ভরন পোষন ছেলে মেয়ে লালন পালন কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে বাবাদের।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারী আইন এবং শাস্তি:
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে প্রস্তাবিত এক আইনে সাজার মেয়াদ এবং জরিমানার পরিমাণ বেড়েছে, তবে একইসাথে কমেছে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স সীমা। মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত প্রস্তাবিত ঐ আইনে নারীর জন্যে বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ এবং পুরুষদের জন্যে ২১ থেকে ১৮ করা হয়েছে।
তবে বয়স কমালেও বাল্যবিবাহের সাথে জড়িতদের শাস্তিও আরো কঠোর করার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে সর্বোচ্চ কারাভোগের মেয়াদ তিনমাসের জায়গায় দুই বছর করা হয়েছে। জরিমানা বাড়িয়ে ৫০,০০০ টাকা করা হয়েছে।অতএব আমরা সচেতন হই এবং অন্যদের সচেতন করি
অসচেতনতা:
আমাদের সমাজে এমনও মা বাবা আছে যারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।তাদের সন্তানদেও তারা সেই অনুযায়ী চালায়।বর্তমান সরকার সবার জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরেও এমন অসচেতন মা বাবার কারনে তাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলো দেখতে পায় না।তারা জানে না শিক্ষা কি?পড়াশোনা করে যে জ্ঞান অর্জন করা যায় আদৌ তাদের এগুলো অজানা।আমাদের আশেপাশে এমন ছেলে মেয়ে থাকলে তাদের বুঝানো উচিত তাদের শিক্ষার আলো দেখানো উচিত।
বাল্যবিবাহ নিয়ে সরকারি পদক্ষেপসমূহ:
বাংলাদেশের অন্যতম একটি সামাজিক সমস্যা বাল্যবিবাহ।এজন্য বাংলাদেশ সরকার তৈরি করেছে আইন।সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। বাল্যবিবাহ সম্পর্কে মানুষকে জানানোর জন্য পালন করা হচ্ছে সমাবেশ,মানববন্ধন কর্মসূচি।প্রত্যান্ত গ্রাম ও শহরের বস্তিগুলোর মানুষ অসচেতন থাকার কারণে কোন কর্মসূচি না মেনেই এখনও বাল্যবিবাহ দিচ্ছে।
সম্প্রতি কমনওয়েলথ নারী ফোরামে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের এবং ২১ বছরের নিচে ছেলেদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা যাবে নাহ।২০১৫ সালে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০১৭ সালে এসে ৪৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে তাহলে এই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করতে পারবো।
পুলিশ প্রসাশনের দায়িত্ব:
আমরা সকলেই দেশ সেবায় নিয়োজিত।আমাদের আশে পাশে কোথাও বাল্যবিবাহ হতে দেখলে সাথে সাথে পুলিশকে জানানো।যদি দূরের পথ হয় তাহলে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশকে জানানো।এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ বাল্যবিবাহ রোধ করবে এবং তাদের বুঝাবে এগুলো আপনি আমি সবার জন্য ই অভিশাপস্বরূপ।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করনীয়:
১| শিক্ষার আলো প্রতিটা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।
২| প্রত্যেকটা মা বাবাকে সচেতন করার জন্য সামাবেশ করা।
৩| অসচ্ছল পরিবার গুলোতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাল্যবিবাহ রোধ করা।
৪| বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের উচিত তাদের আশে পাশে যারা শিক্ষার আলো পায়নি তাদের বাল্যবিবাহ সম্পর্কে অবগত করা।
৫| সরকার কর্তৃত ঘোসিত আইন কানুন তাদের জানানো।
সর্বপরি আমারা যে যেভাবে পারি অসচেতন মানুষগুলোকে সচেতন করা। দারিদ্র্য দূর করা।পড়াশোনা করার মতো পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া।তাহলেই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়ে উঠবে।
যে দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ নারীরা বিবাহিত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন সেই দেশের মা বাবার কাছে বাল্যবিবাহ কোন আকর্ষনীয় সমাধান নয়।তারা বাধ্য হয়েই এমন কাজ করে।আমাদের উচিত সব সময় সব মানুষের পাশে ছায়া হয়ে দাঁড়ানো।দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য আমরা সব করবো।দেশ হবে সুন্দর। অকালে ঝরে যাবে না কোন মেয়ের জীবন।ফুরফুরে জীবন নষ্ট হবে না ছেলেদের।তারা বুজবে এবং অন্যদের বুঝাবে এমন মানসিকতা তৈরি করে দিতে হবে।এ ভাবে বাল্যবিবাহের সমস্যা অধিকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও প্রতিকার, সন্তানের উপরে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রভাব