পরীমনির সংসার বৃত্তান্ত!
২০২৩ সালের শুরুতেই জোর গুঞ্জন উঠেছিল “আবারও ভাঙ্গনের পথে ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়িকা পরীমনির সংসার”। নিজের ফেসবুক আইডিতে শরিফুল রাজের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের ইঙ্গিত দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন পরীমনি। এমনকি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি শরীফুল রাজের বিরুদ্ধে গায়ে হাত তোলারও অভিযোগ করেন। পরীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ মুখ বন্ধই রেখেছিলেন। একটি স্বনামধন্য গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পরীর সঙ্গে সম্পর্ক আবার জোড়া লাগবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজ জানিয়েছিলেন, ‘না, আর হবে না।’
শেষ পর্যন্ত রাজ-পরীর সম্পর্ক টিকে গেছে। তবে বিচ্ছেদ হলে এটি পরীমনির কত নম্বর বিচ্ছেদ হতো? অনেকেই বলেন ৪, আবার অনেকেই বলেন ৫। সঠিক সংখ্যা জানার কোন উপায়ও অবশ্য নেই। কারণ মিডিয়ার সামনে পরীমনি কখনো তাঁর অতীত নিয়ে কথা বলেন নি।
প্রথম সারির গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের উপরের ভিত্তি করে চলুন পরীমনির অতীত থেকে ঘুরে আসা যাক।
২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পরীমনি এবং সাংবাদিক তামিম হাসানের পক্ষ থেকে প্রেমের ঘোষণা আসে। মাঝে মধ্যে পরীমনি তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ছবি প্রকাশ করতেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে তামিম হাসানের সঙ্গে পরীমনির বাগদান হয়। অনেকের ধারণা ছিল, পরের বছরের কোনো এক ভালোবাসা দিবসে বিয়ের কাজটি সেরে নেবেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত তামিমের সঙ্গে বিয়ে হয়নি পরীর।
এরপর ২০২০ সালের ৯ মার্চ হঠাৎ করেই অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক হৃদি হকের অফিসে কাজি ডেকে বিয়ের কাজটি সেরে নেন পরীমনি ও পরিচালক কামরুজ্জামান রনি। “জানেন, আমরা ৩ টাকায় বিয়ে করেছি। কি, কিউট না? আমাদের বিয়ের দেনমোহর ৩ টাকা।”- এই বলে একটি সংবাদ মাধ্যমকে নিজের বিয়ের খবর জানিয়েছিলেন পরী।
মূলত হৃদি হকের ‘১৯৭১ঃ সেই সব দিন’ ছবির সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলেন রনি। আর ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছিলেন পরীমনি। এই ছবিতে কাজ করতে গিয়েই তাদের মধ্যে ভালো লাগা তৈরি হয়। সেই থেকে বিয়ে।
এই বিয়ে নিয়ে পরীমনি একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “প্রায় পাঁচ মাস আগে ছবির গল্প শোনানোর জন্য হৃদি আপুসহ রনি এসেছিল আমাদের বাসায়। তখন আমি তাকে (রনিকে) খেয়ালই করিনি। শুটিংয়ে গিয়ে কোথায় থাকব কীভাবে যাব, সেসব নিয়ে তার সঙ্গে প্রথম আলাপ শুরু হয়। এভাবেই একসময় আমাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
মার্চের ৩ থেকে ৭ তারিখ আমরা ঠাকুরগাঁওয়ে শুটিং করি। সেখানে ভীষণ আনন্দে সময় পার হয়ে যায়। ৮ মার্চ ঢাকায় এসে আমি তাকে খুব মিস করছিলাম। পরদিন ৯ মার্চ আমরা দেখা করি এবং সে(রনি) আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমার মন যেন কেমন করে ওঠে। ওই রাতেই আমরা বিয়ে করে ফেলি।“
তবে এই তিন টাকা দেনমোহরের বিয়ে ৩ মাসও টেকে নি। পরীমনির ঘনিষ্ঠ অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, পরীমনি আসলে হুজুগে বিয়েটা করেছেন। বিয়ের পর কয়েক দিন তাঁকে স্বামীর সঙ্গে দেখা গেছে। তারপর আর কোনো খবর নেই।
পরীর দ্বিতীয় বিয়েটাও যেন প্রথম বিয়ের চিত্রনাট্য মেনেই এগিয়েছে। ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারী পরী ও শরিফুল রাজের বিয়ের খবর গণমাধ্যমে আসে। সেই সাথে এটাও জানা যায়, পরী ততদিনে ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
পরী-রাজের ভালোবাসার গল্প শুরু হয় গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত “গুনিন” ছবির সেট থেকে। রাজকে পরী নিজেই প্রপোজ করেছিলেন জানিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘রাজের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মনে হয়েছে, তার রাজ্যে তো রানি হওয়াই যায়। আমিই প্রথম রাজকে প্রেমের প্রপোজ করেছি।’
ক্ষণিকের আবেগ থেকে সিদ্ধান্ত নিলে যা হয়, তাই হয়েছে বারবার। মিডিয়ার সামনে লোক দেখানো আদিখ্যেতা পরী-রাজ দুজনই করতেন। কিন্তু নিজেদের ভেতরে চলমান অশান্তি গোপন করে অভিনয় বেশিদূর চালিয়ে নিতে পারেন নি এই বছরের শুরুর দিকে।
পরাণের অবিশ্বাস্য সাফল্যের পর পরিচালক রায়হান রাফিকে দালাল বলে, রাজ-মীমের দিকে সন্দেহের তীর ছোড়েন পরী। এরপর থেকে রাজ-পরীর সম্পর্কে অবনতির বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক সহ অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে চর্চা শুরু হয়। ভেতরে–ভেতরে রাজ-পরীর সম্পর্কটা যে বিচ্ছেদের দিকে গড়াচ্ছিল, তা তাদের খুব ঘনিষ্ঠজনেরা আভাস দিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই আভাস সত্য বলে প্রমাণিত হয় নি।
মফস্বল থেকে উঠে আসা একজন অতি সাধারণ শামসুন্নাহার স্মৃতি চলচ্চিত্রে এসে পরিচিতি পান পরীমনি নামে। কোন চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার আগেই তারকাখ্যাতি পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ মুক্তির আগেই অন্তত ২০টি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পরী রাতারাতি তারকা বনে যান। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতেই তারকাখ্যাতি পাওয়ার পর লাগামহীন ও বেপোরয়া জীবন যাপনের জন্য পরীমনি আলোচিত ও সমালোচিত হতে থাকেন। একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়ে যান। এই সবের শেষ কোথায় তা একমাত্র পরীই বলতে পারবেন!