ঈদ উল ফিতর অর্থ কি? কীভাবে শুরু হয়েছিল?

আরবি শব্দ ঈদ মানে খুশি, আনন্দ বা উৎসব। দুনিয়ার সমস্ত জায়গা জুড়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঈদ সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ঈদ প্রধানত দুটি। একটি হলো ঈদ উল ফিতর বা রমজানের ঈদ এবং অপরটি ঈদ উল আযহা বা কুরবানীর ঈদ। আজ আমাদের মুসলিম উম্মাহর প্রধান উৎসব রমজানের ঈদ বা ঈদ উল ফিতর নিয়ে আপনাদের জানাবো যা প্রতি আরবী বছরের শাওয়াল মাসের এক তারিখে উদযাপন করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জন্য ঈদ পালন করা ওয়াজিব তথা অবশ্য পালনীয়। এছাড়াও ফিতরা প্রদান করাও একটি পালনীয় রীতি যা ঈদ উল ফিতরের নামাজের আগেই অসহায় দুঃস্থদের মাঝে প্রদান করা হয়।

ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের সাথে সাথেই কিন্তু ঈদ উদযাপন শুরু হয়নি। ঈদ উল আযহা কখন ও কোন প্রেক্ষাপটে শুরু হয়েছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেলেও ঈদ উল ফিতর কখন বা কোন প্রেক্ষাপটে উদযাপন করা শুরু হয়েছে তা সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত কিছু জানা যায় নি। যদিও রমজান মাসের শেষে এবং শাওয়াল মাসের এক তারিখে মুসলমানগণ ঈদ উদযাপন করেন। ইসলামের ইতিহাস বিষয়ক গবেষক এবং ইসলাম বিশেষজ্ঞদের মতে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ঈদ উদযাপন করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আতাউর রহমান মিয়াজী এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ঈদ উল ফিতর হিজরি দ্বিতীয় সনে প্রবর্তন করা হয়েছিল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা থেকে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন তখনকার সময়কে ভিত্তি করে হিজরী সাল গণণা করা হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরি সন গণনা শুরু করা হয়েছিল আরো ১৭ বছর পরে খলিফা উমর (রা.) এর আমলে।

হিজরি বছর বা আরবি বছরের অষ্টম মাসে অর্থাৎ শাবান মাসে রোজা বাধ্যতামূলক করার আয়াত নাজিল করা হয় এবং নবম মাসে এক মাস সিয়াম সাধনাকে ফরজ করা হয়। অতঃপর দ্বিতীয় হিজরি সনে এসে বিধান দেয়া হয় যে রমজান মাস চাঁদের হিসাবে ২৯ দিনেও শেষ হতে পারে বা ৩০ দিনেও শেষ হতে পারে। তাই শাওয়াল মাসের এক তারিখে ঈদ উদযাপন করা হয়।

এর বাইরে ঈদ উল ফিতরকে নিয়ে আর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

উদযাপন

ইসলাম ধর্মাবলম্বীর লোকজন ঈদ উল ফিতরকে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালন করে থাকেন। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের এক তারিখের দিনটি তাদের জন্য খুবই আনন্দের। এ দিনে ছোট বড় সকল মানুষ ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সাথে বুক মিলায় এবং ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। পাশাপাশি তারা নতুন পোশাক পরিধান করেন এবং গরীব অসহায় মানুষের মাঝে ফিতরা বিতরণ করে সবার মধ্যে খুশির ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। এছাড়াও ঈদের নামাজের পর মিষ্টি খাদ্যদ্রব্য খাওয়া এবং আত্মীয় স্বজন ও পরিজনের মাঝে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতি ও প্রচলিত আছে

বাংলাদেশ (বঙ্গে) ঈদ কখন শুরু হয়েছিল বা যেভাবে পালিত হয়েছিল

বর্ণিত আছে দেড়শ বছর আগেও বঙ্গ দেশের মানুষের মধ্যে ঈদ তেমন কোন বড় উৎসব ছিল না। ফারায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী মুহাম্মদ শরীয়তুল্লাহর সময় বঙ্গে উৎসব করে ঈদ উদযাপনের রেওয়াজ শুরু হয়। তার আগে বঙ্গে মুসলমান ছিল অনেক বেশি কিন্তু তাদের রীতি নীতির মধ্যে লোকায়ত ধর্মের প্রভাব ছিল। বেশি তাই সে সময়ে ঈদ উদযাপনের তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি।

মুঘলরা ঢাকায় এসেছিল ১৬১০ সালে। তখন তাদের প্রেরিত নায়েব-ও নাজিমরা ঈদ উদযাপন করত। চাঁদ উঠলে তারা আনন্দ উৎসব শুরু করত। ঈদের দিন তারা একসঙ্গে নামাজ পড়তেন। নামাজ পরে তারা হাতি বা ঘোড়ার পিঠে ফেরার পথে সাধারণ জনগণের দিকে পয়সা ছুড়ে দিতেন। ঈদ তাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল । সাধারণ জনগণ ঈদ সম্পর্কে এতটা জ্ঞাত ছিল না।

আরও পড়ুন- পবিত্র লাইলাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজের অর্থ ও ইতিহাস

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *