চর্চার বিষয় যখন বলিউড মাফিয়া
গ্ল্যামার কিংবা জনপ্রিয়তা, সব দিক থেকে সব সময়ই সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে বলিউড। তাই বলিউড তারকাদের যে কোন কথা মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে কোটি কোটি অনুরাগীদের মাঝে, কিছু কিছু বিষয় চর্চা হয় সকালের মুখে মুখে। তেমনি একটি বিষয় “বলিউড মাফিয়া”। বলিউড মাফিয়াদের নিয়ে সাধারণত বলিউড তারকারা স্পষ্ট করে কিছু বলতে চান না কখনোই। প্রথম সারির মিডিয়াগুলোও যেন থাকে নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় ।
তবে স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্টতার সুরে হলেও প্রায়শই কথোপকথনের মাঝে উঠে আসে বলিউড মাফিয়া এবং বলিউডে চলা ভয়ানক স্বজনপ্রীতি নিয়ে অনেক কথা। বলিউডের মাফিয়া চক্র কীভাবে বলিউডে তাদের কর্মক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে, সে সম্পর্কে কথা বলেছেন এমন কয়েকজন তারকাদের বক্তব্য আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।
অভিনব কাশ্যপ বলেছেন, সালমান খান তার ক্যারিয়ার নষ্ট করেছে
বলিউড মাফিয়া শব্দের সাথে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে বলিউডের ভাইজান খ্যাত সালমান খানের নাম। অভিনব কাশ্যপ তার এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন সালমান খানের এই কুৎসিত দিকটি।
অভিনব বলেছেন, অভিনেতা সালমান খান ইন্ডাস্ট্রিতে তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছেন। তিনি যখন বলিউডে নিজেকে প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন, ঠিক তেমন সময়ে সালমান খান এবং আরবাজ খান বিশাল বাধা হিসাবে কাজ করেছিলেন।
মুক্তির আগে আমার চলচ্চিত্র “বেশারম” এর বিরুদ্ধে একটি নিরন্তর নেতিবাচক প্রচার চালানোর জন্য তাদের পিআরও পেয়েছে। এতে ডিস্ট্রিবিউটররা আমার ফিল্ম কিনতে ভয় পায়। রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট এবং আমি নিজেরাই ছবিটি মুক্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সক্ষম এবং সাহসী ছিলাম। কিন্তু লড়াই সবে শুরু হয়েছিল। আমার শত্রুরা অনেকেই ছবির বক্স অফিস ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত ছবিটির বিরুদ্ধে নিরন্তর নেতিবাচক ট্রোলিং এবং বাজে কথা প্রচার করে চলছিল।
মনোজ বাজপেয়ী বলেন বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে বহিরাগতদের সম্মান করা হয় না
অয়ন বাজপেয়ীর একটি সাক্ষাৎকারে মনোজ বাজপেয়ী বলেন-
“আমি কীভাবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকলাম! এমন একটি ইন্ডাস্ট্রি যেখানে বাইরের লোকদের প্রতি শ্রদ্ধা নেই? যদি এখানে একটি ভাল ফিল্ম বক্স অফিসে খারাপ হয়, তবে ইন্ডাস্ট্রির কথা ভুলে যান। কারণ আপনি ভাল ফিল্ম বা খারাপ ফিল্ম যাই তৈরি করেন না কেন, আপনি ভাল পারফরম্যান্স দিন বা খারাপ পারফরম্যান্স – মূলধারার সমালোচক এবং বাণিজ্য ধারার বিশ্লেষকরা এটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে এটি একটি খারাপ চলচ্চিত্র কারণ বক্স অফিসে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।”
বলিউডের স্বচ্ছতার বিষয়ে কঙ্গনা রানাউত
বলিউডে বিতর্কিত তারকা হিসেবে বরাবরই সবার কাছে পরিচিত অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। স্পষ্ট ও ভিন্নমত প্রকাশের ক্ষেত্রে, কোন বাঁধাই যেন দমিয়ে রাখতে পারে না বলিউডের “কুইন” খ্যাত এই অভিনেত্রীকে। যদিও এটা আসলেই সত্য যে, তিনি প্রায়শই বিতর্কিত মন্তব্য করে থাকেন শুধুমাত্র তাক লাগানোর জন্য।
তবে তিনি বলিউড এবং এর পক্ষপাতিত্ব সম্পর্কে খুব স্বচ্ছ ছিলেন। তিনি তার এক পোস্টে বলেছিলেন যে, মহেশ ভাট তার দিকে একটি জুতো ছুঁড়ে মেরেছিলেন কারণ কঙ্গনা তার ছবিতে কাজ করতে অস্বীকার করেছিলেন। এমনকি আদিত্য চোপড়া তাকে হুমকি দিয়েছিলেন। কারণ কঙ্গনা সালমান খানের সাথে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে এমন লোক রয়েছে যারা অন্যদের ব্যর্থতার পরিকল্পনা করে: রাভিনা ট্যান্ডন
রাভিনা প্রকাশ করেছেন যে, বলিউডে একটি গার্ল গ্যাং এবং ক্যাম্প রয়েছে, যারা অভিনেতা অভিনেত্রীদের পতনের পরিকল্পনা করে। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাভিনা প্রকাশ করেছেন,
“এখানে কিছু বাজে মানুষ রয়েছে, যারা আপনার ব্যর্থতার পরিকল্পনা করে। তারাই সবসময়ই আপনাকে নিচে দেখতে চাইবে এবং চলচ্চিত্র থেকে সরাতে চাইবে। এটা আক্ষরিক অর্থে রাজনীতির মতো। তারা গেম খেলে প্রতিনিয়ত।”
অমিত সাধকে স্পষ্টভাষী হওয়ার জন্য টিভি ইন্ডাস্ট্রি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
অমিতকে টিভি ইন্ডাস্ট্রি নিষিদ্ধ করেছিল কারণ সে ছিল স্পষ্টভাষী এবং কিছু কঠোর সত্য কথা তিনি জনসম্মুখে প্রকাশ করেছিলেন। সাধ একটি সাক্ষাৎকারে বলিউড হাঙ্গামাকে বলেছিলেন,
“তারা একে অপরকে ডেকে বলেছিল ‘একে কোন কাজ দিও না’। আমি তখন বলেছিলাম, ‘আচ্ছা? কাজ দিবেন না? তাহলে আমি টিভি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে চলচ্চিত্রে যাবো।”
দিব্যা দত্ত বলেছেন যে তিনি একাধিক সিনেমায় বাদ পরেছেন
ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের সংগ্রাম, গোষ্ঠীবাদ এবং পক্ষপাতিত্ব সম্পর্কে তার মতামত প্রকাশ করে দিব্যা দত্ত একটি সাক্ষাতকারে ইন্ডিয়া টাইমসকে বলেছিলেন,
“এটা অনেকটা বিশাল ক্ষতির অনুভূতির মতো, হঠাৎ ফোন করে বলা হলো যে অন্য কাউকে নেয়া হয়েছে। এভাবে শেষ মুহূর্তে আমাকে অনেক সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। কারণ আপনি জানেন যে আপনি সেই ভূমিকায় কতটা ভাল হতে পারতেন।”
গোবিন্দর খারাপ সময়ে বলিউড তাকে এড়িয়ে গিয়েছিল
রিপাবলিক টিভির সাথে একটি সাক্ষাতকারে বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা প্রকাশ করেছেন যে, গোবিন্দকে ইন্ডাস্ট্রি এড়িয়ে গেছে। তিনি বলেছিলেন,
“আমি দেখেছি কীভাবে গোবিন্দর প্রযোজনা করা চলচ্চিত্রটি কিছু লোকের কারণে দখল করা হয়েছিল। ছবিটি ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু তারপরও তাকে এই সবের মধ্য দিয়ে ভুগতে হয়েছে।”
রণবীর শোরে
রণবীর শোরে কখনই তার দর্শকদেরকে খুব ভাল এবং চমকপ্রদ পারফরম্যান্স দিতে ব্যর্থ হননি। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রণবীর জানান,
“আমি পেশাগত এবং সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, সব দিক থেকে সমানভাবে চাপে পড়েছিলাম। প্রতিটি সুযোগ এবং প্রতিটি প্ল্যাটফর্ম তারা পাবে, তারা আমার সম্পর্কে মিথ্যা বলবে। বলবে আমি একজন মদ্যপ এবং অপব্যবহারকারী। এই লোকেরা এত শক্তিশালী যে প্রেস কেবল তাদের কথা শুনবে। আপনি কেবল অসহায় এবং হতাশ বোধ করবেন। কারণ আপনি এটি সম্পর্কে কিছুই করতে পারবেন না। এটা আমার জন্য সত্যিই বিষাক্ত হয়ে পড়েছিল এবং আমাকে কিছু সময়ের জন্য দেশ ছাড়তে হয়েছিল।”
আরও পড়ুন- পরীমনির সংসার বৃত্তান্ত!