বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের সব মানুষের উচিৎ এই মহান নেতার জীবন সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

জন্ম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৭ই মার্চ, ১৯২০ (রোজ মঙ্গলবার), বাংলা: ৪ চৈত্র, ১৩২৬ সাল

ঠিকানা

জেলা: ফরিদপুর, মহকুমা গোপালগঞ্জ (মধুমতি নদীর তীরে)

ইউনিয়ন: পাটগাতী, গ্রাম: টুংগীপাড়া (বাইগার নদীর তীরে)।

শৈশব

ডাকনাম: খোকা (মা-বাবা আদর করে ডাকতেন)।

গ্রামবাসীর দেয়া নাম: মিঞা  ভাই।

বন্ধুরা ডাকতো: মুজিব ভাই (মুজিব অর্থ উত্তরদাতা- বন্ধবন্ধুর নানা শেখ আব্দুল মজিদ এই নাম রাখেন)।

উচ্চতা: ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি।

পিতার নাম: শেখ লুৎফর রহমান (গোপালগঞ্জ আদালতের সেরেস্তাদার  ছিলেন। সেরেস্তাদার অর্থ: যারা আদালতের নথিপত্র সংরক্ষণ করেন)।

মাতা: সায়রা খাতুন

দাদা: শেখ আব্দুল হামিদ

নানা: শেখ আব্দুল মজিদ (শেখ মুজিবুর রহমানের  নাম রাখেন)।

শেখ মুজিবুর রহমানের দাদা এবং নানা আপন ভাই ছিলেন এবং মা ও বাবা  চাচাতো  ভাই-বোন ছিলেন।

স্ত্রী: শেখ ফজিলাতুন্নেছা (রেণু) জন্মঃ ৮ আগস্ট ১৯৩০, পিতা: শেখ জহুরুল হক দুদু মিয়া, মাতা: হোসনে আরা বেগম।

শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়।

বঙ্গবন্ধু শহীদ হন: ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ শুক্রবার, ৫৫ বছর বয়সে। বাংলা ২৯ শ্রাবণ, ১৩৮২।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  শিক্ষাজীবন

১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (শেখ আব্দুর রশিদ  এমই স্কুল) জাতির জনকের প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রজীবনের সূচনা হয়। ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ সীতানাথ একাডেমিতে (গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল) তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে ১৪ বছর বয়সে মাদারীপুর ইসলামিয়া হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। বেরিবেরি – হার্ট দুর্বল হয়। ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)-এর অভাবে বেরিবেরি রোগ হয়।

১৯৩৬ সালে বঙ্গবন্ধু গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁর চিকিৎসক ছিলেন কলকাতার ডাক্তার টি আহমেদ। ১৯৩৭ সালে ভর্তি হন গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ মিশনারি স্কুলে এবং তিন বছর বিরতির পর আবার পড়ালেখা শুরু করেন। তাঁর গৃহশিক্ষক ছিলেন- কাজী আব্দুল হামিদ। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। তাঁর হাতেই শেখ মুজিবের রাজনীতির হাতেখড়ি।

বঙ্গবন্ধু ১৯৩৯ সালে নবম ও ১৯৪০ সালে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। গোপালগঞ্জ শহরের রসরঞ্জন সেনগুপ্ত শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাইভেট শিক্ষক ছিলেন। ১৯৪১ সালে জ্বর থাকায় এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বাংলায় পাস করতে পারেন নি। বঙ্গবন্ধু ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স তথা এসএসসি পাস করেন। তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান মাওলানা আজাদ কলেজ) আইএ ভর্তি হন। বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতে শুরু করেন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে বেকার হোস্টেলের ২৩ নম্বর রুম গ্রন্থাগার এবং ২৪ নম্বর রুম মিউজিয়াম হিসেবে তৈরি করেছে।

১৯৪৭ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। পাঠ্যবিষয় ছিলো ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এ বছরই (১৯৪৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’ক্লাসে ভর্তি হন। ঢাবিতে তাঁর রোল নম্বর ছিলো ১৬৫ এসএম (সলিমুল্লাহ মুসলিম) হল।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৩৯ সালে বঙ্গবন্ধু মুসলিম ছাত্রলীগে যোগ দেন (গোপালগঞ্জ সম্পাদক)। ১৯৪০ সালে তিনি নিখিল  ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। এক বছরের জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

১৯৪৩ সালে  মুসলিম লীগের  কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৪৫ সালে ইসলামিয়া  ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি, ফজলুল হক মিলনায়তনে নাজমুল করিমের সভাপতিত্বে পূর্ব  পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৪৯ সালে ২৩ জুন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন এবং যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৫৩ সালে  দলের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর, প্রথম সাধারণ নির্বাচনে  সব বিরোধী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন।

১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ, সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে  যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে বিজয়ী হন।

১৯৫৪ সালের ১৪ মে, বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় কৃষি, ঋণ সমবায় ও পল্লীউন্নয়ন বিষয়ক সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

১৯৫৫ সালের ৫ জুন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৬ সালে সরকারের (আতাউর রহমান সরকারের) শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম,  দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড মন্ত্রী হন।

১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করেন।

১৯৬৬ সালের ১ মার্চ, দলের  সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্থাৎ ১৬৯ টির মধ্যে ১৬৭ আসন লাভের  মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সমগ্র পাকিস্তানের নেতা হয়ে ওঠেন।

১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ, বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষণে ঘোষণা  করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণে  স্পষ্ট  হয়ে যায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ, প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি,প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ, নতুন সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির জনকের নেতৃত্বে  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টির  মধ্যে ২৯৩ টি আসনে বিজয়ী হয়।

১৯৭৩ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, আওয়ামী লীগ  সিপিবি ও ন্যাপের সমন্বয়ে ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠন করেন।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, পুনরায়  রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।

১৯৭৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি  ডিক্রির মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে “বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)” নামে একটি নতুন একক রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

বঙ্গবন্ধুর কারা জীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু মোট ২১ বার গ্রেপ্তার হন।

স্কুলে ছাত্রাবস্থায়  ব্রিটিশ আমলে সাত দিন। ৪,৬৭৫ দিন পাকিস্তান সরকারের আমলে।

জীবনের ১৪ বছর তিনি  কারাগারে কাটিয়েছেন।

১৯৩৮ সালে প্রথম কারাগারে যান (সাত দিন, প্রথম কারাভোগ)।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ -১৫ মার্চ (৫ দিন)

১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ – ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৯(১৩২দিন)

১৯ এপ্রিল, ১৯৪৯- ২৮ জুন ১৯৪৯(৮০দিন)

সেপ্টেম্বর ১৯৪৯(২৭ দিন)

১৯৪৯ সালের ২৫ অক্টোবর – ২৭ ডিসেম্বর (৬৩ দিন)

১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি – ১৯৫২ সালের ২৭ ডিসেম্বর  (৭৮৭ দিন)।

১৯৫৪ সালে নির্বাচনে  জয়লাভ করে (২০৬ দিন)।

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক, ১১ অক্টোবর গ্রেফতার(১ হাজার  ১৫৩ দিন, একটানা সবচেয়ে বেশি, ৩ বছরের বেশি সময়)।

১৯৬২ সালের  ৬ জানুয়ারি – ১৮ জুন( ১৫৮ দিন)।

৬৪ ও ৬৫ সালে- (৬৬৫ দিন- বিভিন্ন মেয়াদে)।

৬ দফার পর ৩২টি জনসভা (৯০ দিন)।

৬৬টি এর  ৮ মে – ১৯৬৯ এর ২২ ফেব্রুয়ারি (১,০২১ দিন)।

১৯৭১ এর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহর – ২৮৮ দিন (স্বাধীনতা ঘোষণার পর)।

এভাবে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে  কারাবরণ করেন।

পারিবারিক জীবন

১৯৩৩ সালে ১৩ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের সময় স্ত্রীর বয়স ছিলো তিন বছর। ফুলশয্যা করেন ১৯৪২ সালে। পারিবারিক জীবনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাঁচ সন্তানের জনক-

১.শেখ হাসিনা, ২.শেখ কামাল, ৩.শেখ জামাল, ৪.শেখ রেহানা,  ৫. শেখ রাসেল

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভাষা আন্দোলন, ছয় দফার ভূমিকা